পটুয়াখালীঃ-পটুয়াখালীর পায়রায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের সবচেয়ে বড় ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই অনুষ্ঠান থেকে তিনি দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন।
সোমবার (২১ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নাম ফলক উন্মোচন করেন। এ সময় বেলুন ওড়ানোর পাশাপাশি এ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন উপলক্ষে এক হাজার ৩২০টি পায়রা উড়ানো হয়।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা পর্বে অংশগ্রহণ করেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আলোচনা অনুষ্ঠান চলছিল।
এর আগে সোমবার (২১ মার্চ) সকাল পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। করোনা মহামারি শুরুর পর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বাইরে দেশের অন্য কোথাও এটিই তার প্রথম সফর।
কলাপাড়ায় পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুলিশ সদস্যরা গার্ড অব অনার প্রদান করে।
এরপর প্রধানমন্ত্রী পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোল জেটিতে যান। রামনাবাদ নদীর মোহনায় বর্ণিল সাজে সজ্জিত ২২০ রঙিন পাল তোলা নৌকা থেকে পতাকা নাড়িয়ে ও সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে পটুয়াখালীবাসী।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন।
কলাপাড়ার ধানখালীর পায়রাতে নির্মিত সর্বাধুনিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কয়লাভিত্তিক এ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। পায়রায় কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালুর মধ্য দিয়ে ২০২০ সালেই বাংলাদেশ আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল ক্লাবে প্রবেশ করে ২০২০ সালেই। আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩তম দেশ। এশিয়ায় সপ্তম ও দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশ ছাড়া শুধু ভারতে এ ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।
এশিয়ার চীন, তাইওয়ান, জাপান ও মালয়েশিয়াতে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কেন্দ্রগুলোতে চীন ও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো ঢাকনাযুক্ত কোল ইয়ার্ড ব্যবহার করে না। ঢাকনাযুক্ত কোল ইয়ার্ড ব্যবহারের ফলে বাতাসের মাধ্যমে খোলা কয়লা থেকে কয়লার গুঁড়ো ছড়ানোর সুযোগ কমে যায়।
৬৬০ মেগাওয়াট করে দুই ইউনিট মিলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি উৎপাদনে আসে ২০২০ সালের মে মাসের ১৫ তারিখে। সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসে একই বছরের ৮ ডিসেম্বর। তবে সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ শেষ না হওয়ায় কেন্দ্রটি থেকে ক্ষমতার চেয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা কয়লা দিয়ে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বর্তমানে এ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ৭০০ থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় যৌথভাবে রয়েছে বাংলাদেশ ও চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল)। বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডাব্লিউপিজিসিএল) ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান অংশীদারে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ছিল ৪৭ শতাংশ। গত ১৩ বছরে ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এখন শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। সম্ভাব্য সকল এলাকায় সঞ্চালন লাইন স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে সরকার। একেবারের দুর্গম এলাকাগুলোতে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।
২০০৯ সালে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। গত ১৩ বছরে ৩ কোটি ১৩ লাখ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ২১ লাখ। ২০০৯ সালে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, বর্তমানে এ ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্যসহ)।
২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল ২৭টি, বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১৫০ টি। ১৩ হাজার ২১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে।
২০০৯ সালে বিদ্যুতের বিতরণ লাইন ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার, বর্তমানে ৬ লাখ ২১ হাজার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দুর্গম এলাকার মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে ৬০ লাখের বেশি সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে।
পটুয়াখালীতে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বইছে খুশির জোয়ার। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে রঙিন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকাসহ জেলার রাস্তা-ঘাট, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সরকারের বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন মেগা প্রকল্প এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে বাহারি রং, আলোকসজ্জা ও ব্যানার-ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে।