সাম্প্রতিক দিনগুলোতে অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলের অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রা গবেষকদের হতবাক করেছে। অ্যান্টার্কটিকায় চলতি সপ্তাহে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সবাইকে সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু সংকটের ফলে এ অঞ্চলের চরম তাপমাত্রা আরও সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠবে। এর ফলে বদলে যেতে পারে পৃথিবীর আবহাওয়া। এ অঞ্চলের প্রাণিদের ওপর এর কি প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে কিছু জানাননি বিশেষজ্ঞরা।
কনকর্ডিয়া গবেষণা স্টেশন জানিয়েছে, শুক্রবার (১৮ মার্চ) এ অঞ্চলের তাপমাত্রা মাইনাস ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক উষ্ণ। আবহাওয়াবিদ ইটিনি কাপিকিয়ান এক টুইট বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাধারণত গ্রীষ্মের শেষের দিকে অ্যান্টার্কটিকায় তাপমাত্রা আরও কম থাকার কথা। কিন্তু ঘটছে ঠিক উল্টো।
ফ্রান্স মেটিও’র গবেষক গেটান হেইমস এ বিষয়টিকে “ঐতিহাসিক ঘটনা” বলে বর্ণনা করেছেন।
সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ১৯৭৯ থেকে ২০০০ সালের মধ্যকার হিসেব অনুযায়ী শুক্রবার (১৮ মার্চ) সমগ্র অ্যান্টার্কটিক মহাদেশটি প্রায় ৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ ছিল।
কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. জাচারি ল্যাবে টুইটারে জানিয়েছেন, আবহাওয়ার এই পরিবর্তন মূলত তাপ এবং আর্দ্রতার মেরুবাহী পরিবহনের সাথে সম্পর্কিত।
আর সিডনি নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক অ্যালেক্স সেনগুপ্ত বলছেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা শক্তিশালী বাতাস অ্যান্টার্কটিকার অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় অবদান রাখছে।
এদিকে ভূ-বিজ্ঞানী জোনাথন উইল টুইটারে লিখেছেন, কনকর্ডিয়া তার সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর-পশ্চিম ২০২১ সালের হিট ওয়েভ (তাপ তরঙ্গ) ধরনের ঘটনা। যা কখনোই হওয়ার কথা নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার বলেছে, ১৯৭৯ সালের পর প্রথমবারের অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্রের বরফ দুই মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার নিচে নেমেছে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে, তারপরেই এ অভূতপূর্ব তাপমাত্রা দৃশ্যমান হয়েছে।
অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর দক্ষিণতম মহাদেশ। অ্যান্টার্কটিকার বেশিরভাগ অংশই বরফ দ্বারা আবৃত, যার গড় পুরুত্ব ১.৯ কিমি (১.২ মা)। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল অঞ্চল। বিশ্বের প্রায় ৭০% স্বাদু পানির রিজার্ভ সেখানে হিমায়িত রয়েছে, যা গলে গেলে বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬০ মিটার (২০০ ফু) বেড়ে যাবে। অ্যান্টার্কটিকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার −৮৯.২ ডিগ্রি সেলচিয়াস (−১২৮.৬ °ফা)। তৃতীয় ত্রৈমাসিকের (বছরের শীতলতম অংশ) গড় তাপমাত্রা −৬৩ °সে (−৮১ °ফা)। প্রাণীদের স্থানীয় প্রজাতির মধ্যে রয়েছে মাইট, নেমাটোড, পেঙ্গুইন, সীল এবং টার্ডিগ্রেড।