এলো মাহে রমাদান, রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে। এ মাসে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে, এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে শৃংখলিত করা হয়, তাকওয়া অর্জনের মাস রমাদান,
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল। এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে।আল-বাক্বারাহ,:আয়াত: ১৮৩
* রমাদান মাস সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন,
মাহে রমাযান শুরু হলে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এবং শয়তানকে শিকলবন্দী করা হয়। ‘রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়’। মিশকাতুল মাসাবিহ হা ১৯৫৬
* রমাদান মাসে ফেরেশতারা ঘোষনা করতে থাকে।
রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন,
একজন ফেরেশতা ঘোষানা করে।,
হে কল্যাণ অনুসন্ধানকারী! কল্যাণের কাজে এগিয়ে যাও। হে অকল্যাণ ও মন্দ অনুসন্ধানী হে অপরাধী ! (অকল্যাণ কাজ হতে) থেমে যাও । এ মাসে আল্লাহ তা‘আলাই মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করেন এবং এটা (রমাযান মাসের) প্রত্যেক রাতেই হয়ে থাকে।
তিরমিজি শরীফ হা ৬৮২
* রমাদানের রোজার ফযিলত সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন,
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় রমাযান মাসে সিয়াম পালন করবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় ‘ইবাদাতে রাত কাটাবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে ‘ইবাদাতে কাটাবে তারও আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।
মিশকাতুল মাসাবিহ, হা ১৯৫৮
* সিয়াম বা রোজার প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা গোপন রেখেছেন, কেননা সিয়াম পালন বান্দা একামত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য করে থাকে,
এ সম্পর্কে রসুলুল্লাহ ( স) বলেছেন
আদম সন্তানের প্রত্যেকটি নেক ‘আমল দশ থেকে সত্তর গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কিন্তু এর ব্যতিক্রম হলো সওম। কেননা, সওম আমার জন্যে রাখা হয় এবং আমিই এর প্রতিদান দিব। কারণ সায়িম (রোযাদার) ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির তাড়না ও খাবার-দাবার শুধু আমার জন্য পরিহার করে। সহীহ মুসলিম হা
১১৫১
* রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দময় মুহুর্ত রয়েছে।
রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন
রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে, তখন সে আনন্দিত হয়; (১) যখন সে ইফতার করে (ইফতারের জন্য সে আনন্দিত হয়)।
আর (২) যখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, স্বীয় রোযার জন্য সে আনন্দিত হবে।” বুখারী শরীফ হা ১৯০৪
* রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ তায়ালার নিকট মিশকো আম্বরের সুগন্ধির চেয়েও প্রিয়। এ ব্যপারে রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন।
لَخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ
নিঃসন্দেহে রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও বেশী পবিত্র ও পছন্দনীয়। বুখারী শরীফ হা ১৯০৪
* রোজা কিয়ামতের দিন রোজাদারের জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট সুপারিশ করবে,
রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন,
সিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য শাফা‘আত করবে। সিয়াম বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মিটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার শাফা‘আত কবূল করো। কুরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে। মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৩৬, তাই আসুন বরকতময় রমাদান মাসের এক মুহুর্ত অবেহলা না করি বরং প্রতিটি মুহুর্ত কুরআন তেলাওয়াত ও অনুধাবন যিকির আযকার, তারাবিহর সালাত, তাহাজ্জুদের সালাত, ও অন্যান্য ইবাদতের মধ্যে কাটিয়ে দেই।
যারা এ মাস পেয়েও তার জীবনের অপরাধ ও গুনাহসমূহ ক্ষমা করাতে পারলো না, সে বড় হতভাগ্য। এ ব্যপারে রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন,
وَرَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ دَخَلَ عَلَيْهِ رَمَضَانُ ثُمَّ انْسَلَخَ قَبْلَ أَنْ يُغْفَرَ لَهُ
ধ্বংস হোক তার নাক, যার নিকট রমাদান মাস এলো অথচ তার গুনাহ্ মাফ হয়ে যাওয়ার পূর্বেই তা পার হয়ে গেল। তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫৪৫
আল্লাহ তায়ালা আমাদের রমাদানের সিয়াম ও অন্যান্য ইবাদত যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
মোঃ আবু বকর সিদ্দিক
ইসলামি গবেষক