জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) রাতের এই ভাষণে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি বলেছেন, তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের রায়কে মেনে নিচ্ছেন। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের এ রায়ে আমি অসন্তুষ্ঠ। তবে এ রায় আমি মেনে নিচ্ছি।’
তবে কোনো আমদানিকৃত সরকারকে (ইমপোর্টেড গভর্নমেন্ট) মেনে নেওয়া হবে না বলেও জোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ইমরান। আগামী রোববার (১০ এপ্রিল) প্রতিবাদ কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে এই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ৩ এপ্রিল ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাশিম সুরি। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) এক রায়ে কাশিম সুরির ওই সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে ফের অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি করার আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরই বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা দেন ইমরান খান।
ডন জানিয়েছে, ভাষণে প্রথমেই ডেপুটির স্পিকারের নির্দেশনার পক্ষে অবস্থান নিয়ে ইমরান খান বলেন, সংবিধানের আলোকেই ডেপুটি স্পিকার অ্যাসেম্বলি স্থগিত ও অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলেন।
এরপর নিজের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের কথা বলতে গিয়ে আবারও বিদেশি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হাজির করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, ‘অনাস্থার পেছনে বিদেশি হস্তক্ষেপ রয়েছে। তার কথায়, ‘আমি সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। কিন্তু বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি তাদের দেখা উচিত ছিল। এটা অতি ভয়ংকর একটি অভিযোগ। একটা ভিনদেশি রাষ্ট্র ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটা নির্বাচিত সরকার উৎখাত করতে চায়ছে।’
ইমরান বলেন, তিনি প্রত্যাশা করছিলেন, রায়ের আগে অন্তত বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন সুপ্রিম কোর্ট। তার ভাষায়, ‘আমরা সত্য বলছি কিনা তা নিশ্চিত হতে সুপ্রিম কোর্ট অন্তত একবার বিদেশি ষড়যন্ত্রের নথিগুলো খতিয়ে দেখতে পারতেন। আমি হতাশ কারণ এটা একটা বিরাট ইস্যু। এটি গুরুত্ব দিয়ে দেখার দরকার ছিল। কিন্তু এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে কোনো আলোচনাই হয়নি।’
গত ৩ এপ্রিল ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছিলেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাশিম সুরি। এরপর ইমরান খানের পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
কিন্তু এই দুই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় বিরোধীরা। চার দিন শুনানির পর বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) ওই দুই সিদ্ধান্ত বাতিল করে পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করার আদেশ দেন সুপ্রিমকোর্ট।
ইমরান খানের অভিযোগ বিষয়টি নিয়ে তড়িঘড়ি করে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। খান বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের এই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে তিনি কষ্ট পেয়েছেন।
ভাষণে পাকিস্তানের চলমান রাজনীতি ও গণতন্ত্র নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশে রাজনীতিকদের বিবেক বেঁচাকেনা চলছে। তার কথায়, ‘শিশুরাও জানে, এখানে অর্থের কাছে বিবেক বিক্রি হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক রাজনীতির চলমান রাজনীতি নিয়ে খেদুক্তি করে ইমরান খান আরও বলেন, ‘এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র। কোন দেশের গণতন্ত্র দিনেদুপুরে এমনবিবেক বিক্রির কথা বলে? তিনি বলেন, পাকিস্তানের তরুণদের সামনে আমরা কি উদাহরণ রেখে যাচ্ছি। তারা যদি দেখে রাজনীতিবীদরা তাদের বিবেককে বিক্রি করে দিচ্ছে, তাহলে তারা কি শিখবে?
ভাষণে প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন)