লকডাউন ভেঙে মদের আসর বসানোর দায়ে জরিমানা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। পার্টিগেট কেলেঙ্কারিতে মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) ব্রিটিশ পুলিশের পক্ষ থেকে জরিমানার চিঠি আসার পর তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। এদিন জরিমানার অর্থও পরিশোধ করেন তিনি। তবে এ ঘটনায় বিরোধীদের পদত্যাগের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন বরিস।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০নং ডাউনিং স্ট্রিট মঙ্গলবার জানায়, করোনাবিধি ভেঙে মদের আসর বসানোর দায়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে জরিমানা দেওয়ার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবে কত ইউরো জরিমানা করা হয়েছে তা উল্লেখ করেনি তারা।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে আরোপিত লকডাউনের বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে ২০২০ সালের মে মাসে সরকারি বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বেশ কয়েকটি পার্টি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী বরিস। এ নিয়ে জনগণ ও বিরোধী রাজনীতিকদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এ জন্য ক্ষমাও চান তিনি।
এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে ব্রিটিশ পুলিশ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। ডেইলি মেইল জানিয়েছে, প্রায় চার মাসের তদন্ত শেষে মঙ্গলবার বরিসকে জরিমানার সুপারিশ করে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। বরিস ছাড়া জরিমানা গুণতে হয়েছে অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ আরও অন্তত ৩০ জনকে।
ব্রিটিশ মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, পার্টিতে অংশগ্রহণকারী অন্তত ৩০ জনকে ৫০ ইউরো করে জরিমানার নোটিশ পাঠানো হয়। তবে বরিসকে ঠিক কত ইউরো জরিমানা করা হয় সে ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি পুলিশ ও ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের কেউই।
করোনা বিধিনিষেধ ভেঙে মদপার্টির আয়োজন নিয়ে এমনিতেই বেশ চাপের মুখে আছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস। বিরোধী এমনকি নিজ দলের মধ্য থেকেই তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। জরিমানার খবর তাকে আরও চাপের মুখে ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেছেন বরিস। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সে সময় আইন ভঙ্গ করার মতো কোনো কাজ তিনি করেছেন বলে তার মনে হয় না। তিনি বলেন, ‘আমি সর্বোচ্চ যেটা করতে পারি সেটা হচ্ছে জরিমানা প্রদান।’
করোনা মহামারির কারণে আরোপ করা লকডাউনের মধ্যে আয়োজিত পার্টির যে দু’টি ঘটনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে সেটি ২০২০ সালের মে ও জুন মাসের। যুক্তরাজ্যজুড়ে সে সময় লকডাউন চলছিল। সংক্রমণ রুখতে জনসমাবেশ ও পার্টিসহ সবকিছুর ওপরই সেসময় নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল।
করোনা সংক্রমণ রুখতে ব্রিটিশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, সে সময় সর্বোচ্চ মাত্র দু’জন বাড়িতে মিলিত হতে পারতেন। ওই বছর ২০ মে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ৪০ জনকে নিয়ে গার্ডেন পার্টি করেছিলেন বরিস।
পার্টিতে অংশ নিতে ই-মেইলের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হয় অতিথিদের। সেই ই-মেইলে ‘ব্রিং ইওর ওন অ্যালকোহল’ (নিজের মদ নিজে আনো) উল্লেখ করে গার্ডেন পার্টির আয়োজন করেছিলেন জনসন। এরপর একই বছরের জুন মাসে জন্মদিনের পার্টিও করেন তিনি। সেখানে ৩০ জন আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। তারা জনসনের জন্মদিনের হ্যাপি বার্থডে গানে সুর মেলান এবং পরে সবাইকে কেক পরিবেশন করা হয়।
জনসনের এই জন্মদিন পার্টির খবর ফাঁস করে স্থানীয় টিভি চ্যানেল আইটিভি। চ্যানেলটি জানায়, জন্মদিনের এই পার্টি যখন আয়োজন করা হয়েছিল জনসন তখনও ক্যারি সাইমন্ডসকে বিয়ে করেননি। ক্যারিই ২০২০ সালের ১৯ জুন জনসনের ৫৬তম জন্মদিনের পার্টির আয়োজন করেন। ৩০ জন কর্মী সেই পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন।