রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত নাহিদ (১৮) নামে এক যুবক ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাত ৯টা ৪০ মিনিটে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউর কর্তব্যরত ডা. তৌফিক এলাহী।
নাহিদের বাবা নাদিম হোসেন জানান, তাদের বাড়ি ঢাকার কামরাঙ্গীরচর দেওয়ানবাড়ী এলাকায়। এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগনালে একটি কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিতে চাকরি করত নাহিদ। সকাল ৮টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে কাজে যায় সে। এরপর দুপুর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। বিকেলে ফেসবুকের মাধ্যমে তার আহত হওয়ার ছবি দেখতে পান তারা। এরপরে তাকে হাসপাতালের বিছানায় খুঁজে পাওয়া যায়।
তিনি আরও জানান, নাহিদ ৬ মাস আগে বিয়ে করেছে। তার স্ত্রীর নাম ডালিয়া। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিল সে। দুপুরে সংঘর্ষের এ ঘটনায় মোরসালিন (২৬) নামে আরও এক যুবক লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন আছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিউ সুপার মার্কেটে কাপড়ের দোকানের কর্মচারী সে। সংঘর্ষের সময় তার মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে মোরসালিনসহ ঢাকা কলেজের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র কানন চৌধুরী (২৩) ও দোকান কর্মচারী ইয়াসিন (১৭)। তাদেরও মাথায় আঘাত লাগে। তাদের অবস্থাও গুরুতর।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। রাত আড়াইটার দিকে সংঘর্ষ থামে। পরে আজ সকালে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষের কারণে রাজধানীর ব্যস্ত মিরপুর সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
রাতের সংঘর্ষের জের ধরে আজ মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। সংঘর্ষের কারণে ওই এলাকায় বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের যানবাহন। ভোগান্তিতে পড়েন শত শত পথচারী। ফলে অন্য সড়কগুলোতেও দেখা দেয় তীব্র জানজট।
সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা কলেজের মূল ফটকের ভেতরে থাকা ছাত্রদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ঢাকা কলেজের ভবনের ছাদ থেকে নিউমার্কেটের দিকে ইটপাটকেল ছুটতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী আহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও। এ ছাড়া সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সময় টিভির প্রতিবেদকসহ ৬ সাংবাদিকের ওপর হামলা করেন ব্যবসায়ীরা। শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার পাশাপাশি ছাত্রদের মধ্যে অনেককে হেলমেট পরে হাতে লাঠি নিয়ে সংঘর্ষে জড়াতে দেখা গেছে। ইটের আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে অন্তত তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইফতারের আগে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে গেলেও সন্ধ্যার পর তারা আবারো ঢাকা কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে অবস্থান নিয়ে আছেন। অন্যদিকে নিউমার্কেটের কাছে অবস্থান নিয়ে আছেন ব্যবসায়ীরা।