নামাজ, রোজা, ইবাদতের পাশাপাশি ধর্মীয় সংস্কৃতি পালন এবং ঐতিহ্য রক্ষায় তুরস্কের মানুষের প্রচেষ্টা বরাবরই চোখে পড়ার মতো। উসমানীয় শাসনের অবসান হলেও বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় কার্যক্রম ও উৎসব পালনের ক্ষেত্রে শতবছর আগের ঐতিহ্যকে এখনো ধরে রেখেছেন তুর্কিবাসীরা।
কোনো শিশু প্রথমবার রোজা রাখলে তার জন্য আয়োজন করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠান। পরিবারের কোনো শিশু প্রথমবারের মতো রোজা রাখলে তার দাদা-দাদি ও নানা-নানি তাকে বিভিন্নরকমের উপহার দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি উৎসাহ জোগায় বয়স্ক সবাই। যার ফলে রোজা রাখা শিশুটির কাছে হয়ে ওঠে অত্যন্ত আনন্দময়।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী তুরস্কের ৯০ ভাগের বেশি মানুষ মুসলিম। তুরস্ককে বলা হয় মসজিদের দেশ। এই দেশে মসজিদের সংখ্যা ৮৩ হাজারের বেশি। রমজান মাস আসলে এখানকার মসজিদগুলো সাজানো হয় নতুনভাবে। মিনারগুলো সাজানো হয় আলোকসজ্জায়। তাতে শোভা পায় বিভিন্ন বাণী, হাদিস ও পবিত্র কোরআনের আয়াত। প্রতি ওয়াক্তের নামাজে মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি মসজিদগুলোকে করে তোলে প্রাণবন্ত। উসমানীর সাম্রাজ্যের ঐতিহ্য বজায় রেখে এখনো বিভিন্ন জায়গায় ইফতারির সময়ের সংকেত দেওয়া হয়, তোপধ্বনির মাধ্যমে।
এ ছাড়া রোজায় তাদের ইফতারির আয়োজন হয়ে থাকে বেশ জমজমাট। সাধারণত ইফতারি শুরু করা হয় খেজুর দিয়ে। এরপর বিভিন্ন রকম ফলমূল এবং থাকে নানা রকমের মিষ্টান্ন। এ ছাড়া জয়তুন, পনিরসহ বিভিন্ন লোভনীয় খাবার শোভা পায় ইফতারের টেবিলে।
তুরস্কে ইফতারে আরেকটি জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে বিশাল আকৃতির এক ধরনের রুটি। এটিকে রমজানের পিঠাও বলে থাকে তারা। আমাদের দেশের মতো ভাজাপোড়া খাবারের প্রচলন নেই তুরস্কে ইফতারের। তুরস্কের পরিবারগুলো ইফতার এবং রাতের খাবার আলাদাভাবে করে না। তারা একসঙ্গে ইফতার এবং রাতের খাবার খেয়ে এরপর নামাজ পড়তে যায়।
এদিকে সকালের নাশতায় যেসব আয়োজন থাকে, সেসব দিয়েই সেহরি সারেন তুরস্কের মানুষ। আর এর মাঝে আছে রুটি, পনির, মধু, জয়তুন, ডিম ও চা। সেহরির সময় একদল মানুষ ঢোল, দামামা বাজিয়ে গান গেয়ে মানুষদের জাগিয়ে তোলেন। প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে তাদের এ রীতি। তুর্কিরা বিশ্বাস করেন সেহরিতে মুসলমানদের জাগিয়ে দেয়া অন্য মুসলমানদের জন্য সওয়াব ও সৌভাগ্য বয়ে আনে। সব মিলিয়ে অত্যন্ত আনন্দমুখর পরিবেশে রমজান মাস পালিত হয় তুরস্কে।