একবার এক বন্দী সিংহকে শিকারীদের জাল কেটে উদ্ধার করেছিল এক ছোট্ট ইঁদুর। গ্রীক গদ্যকার ঈশপের সেই বিখ্যাত গল্পকে এতোদিন কাল্পনিক মনে হলেও এবার তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। তবে এবার সিংহের যায়গায় মানুষকে সাহায্য করবে এক রোবট ইঁদুর। যেকোনো দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে সাহায্য করতে পারে এমন একটি রোবট ইঁদুর তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অনেক দূর এগিয়েছে কাজ।
চীনের বেইজিং ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির প্রফেসর কিং শি -এর নেতৃত্বে একটি দল উদ্ধার কাজের জন্য ইঁদুরদের বেছে নিয়েছেন কারণ, কোনো দীর্ঘ ও সরু পথে চলাচলে ইঁদুরের জুড়ি মেলা ভার। ক্ষুদ্র শরীর এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী তত্পরতার কারণে সংকীর্ণ জায়গায় খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম তারা।
বিজ্ঞানীরা “স্কুরো” বা “এসকিউআরও” (ছোট আকারের চতুষ্পদ রোবোটিক ইঁদুর) নামে একটি মেকানিক প্রোটোটাইপ তৈরি করেছেন, যা তাদের ইঁদুরের গতিবিধি সম্পর্কে আরও অধ্যয়ন করতে সহায়তা করে। তারা বলছেন, এই ছোট আকারের রোবটটি সরু টানেল, রুক্ষ ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে যেতে সক্ষম এবং এমনকি লাথি মারার পরেও সে নিজেকে ঠিকঠাক তুলে নিতে পারে।
আকারের কারণে রোবটটির চারটি পায় দুই ডিগ্রি স্বাধীনতা রয়েছে। এছাড়া এর কোমরে দুই ডিগ্রি এবং মাথায় দুই ডিগ্রি স্বাধীনতা রয়েছে, অর্থাৎ রোবটটির এই অঙ্গগুলো দুই ডিগ্রি পর্যন্ত নমনীয়। পাশপাশি রবোটটির নকশা করা হয়েছে একটি বাস্তব ইঁদুরের ধাঁচে। যার ফলে দীর্ঘ নমনীয় মেরুদণ্ডের অনুকরণ পেয়েছে সেটি, যা রোবটটিকে দ্রুত বাঁকতে এবং ঘুরতে দেয়।
চলতি মাসে এ বিষয়ক একটি গবেষণা ‘আইই ট্রানজেকশন অন রোবোটিক্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে যে “স্কুরো” সংকীর্ণ স্থানের মধ্যে প্রকৃত ইঁদুরের গতি অনুকরণ করতে সক্ষম।
একই স্কেলের চতুর্মুখী রোবটের তুলনায়, স্কুরো তুলনামূলকভাবে ছোট এবং ওজন মাত্র ২২০ গ্রাম।
প্রথমে এটিকে একটি চাকাযুক্ত রোবোটিক ইঁদুর হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল, তবে চাকাগুলোকে পরে পা দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে এর গতিশীলতা আরও বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রযুক্তিটি আরও উন্নত হলে স্কুরো দুর্যোগ অঞ্চলে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান দিবে, পাশপাশি দুর্গম স্থানগুলোতে দ্রুত অভিযান চালানো সহজ হবে। বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।