রাজধানীর বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যসহ নানা অপরাধে জড়িত ৪১জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাবের ছয়টি দল।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তাররা ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাই করছিলো। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এই বাহিনী।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় রাজধানীর একটি সড়কে এক চাঁদাবাজ একটি লরি থামিয়ে চালকের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন।
আরেকটি আলাদা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, নগরীর আরেকটি সড়কে একটি দূরপাল্লার বাসের সহকারীর কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন আরেকজন।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রাজধানীর সবুজবাগ, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, তেজগাঁও, মুগদা, শাহবাগ, মতিঝিল, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর ও পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় আলাদা অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে ৩৩ জন চাঁদাবাজ ও ৮ জন ছিনতাইকারী।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সবজি ও ফলের দোকান, ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান, লেগুনা স্ট্যান্ড এবং মালবাহী গাড়ী থেকে জোর করে তারা চাঁদা আদায় করতো।
ফুটপাতের দোকানদারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করছে। এই কাজে চার থেকে পাঁচ জনের একটি গ্রুপ জড়িত।
এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুযোগ পেলেই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়।
ইফতার-সেহেরির পর তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাই কাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করে না।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর খিলগাঁও, মালিবাগ রেইল গেইট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালবার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, লেবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ ও বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা হতে ভোর পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়।
ওয়ারী থানার কাপ্তান বাজারে চাঁদাবাজি শুরু হয় মূলত রাত ১২ টার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত। মুরগি বহনকারী কোন গাড়ি এই বাজারে প্রবেশ করার সাথে সাথেই গাড়ির ধরন ও মুরগির পরিমাণ এর উপর নির্ভর করে চাঁদার পরিমাণ ঠিক করে দেয়া হয় এবং জোরপূর্বক তা আদায় করা হয়। কেউ যদি চাঁদা না দেয় তাহলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়।
যেমন সেই গাড়ির মুরগি আনলোড বা বিক্রিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়। তাছাড়াও যেসব গাড়িতে তুলনামূলকভাবে ছোট, অসুস্থ বা মৃত মুরগি পাওয়া যায় তাদেরকে বেশি চাঁদা দিতে হয়। প্রতিরাতে এখান থেকে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করা হয়।
রমনা থানার শান্তিনগরে মূলত রাস্তার ধারে ভাসমান দোকান থেকে নির্দিষ্ট হারে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হয়। সকাল ও বিকাল দুই শিফটে চাঁদা আদায় করা হয়। এই কাজে ৪-৫ জনের একটি গ্রুপ জড়িত। প্রতিদিন এখান থেকে প্রায় লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়।
চাঁদার টাকা না দিলে আসামীরা নিরীহ দোকানদারদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি প্রদান করে এবং তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে মার পিট করে। তাদের কথা মত কেউ চাঁদার টাকা না দিলে দোকান বসতে দেয়া হবে না বলেও দোকানদারদের হুমকি দেয়া হয়।
লেগুনা স্ট্যান্ডে তাদের কথা মত কেউ চাঁদার টাকা না দিলে এই রুটে কোন লেগুনা চলতে দেয়া হবে না বলে হুমকি প্রদান করে। তখন লেগুনা চালকরা পেটের দায়ে বিনা প্রতিবাদে চাঁদা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়। এ সকল চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনার ফলে নিরীহ দোকানদার ও লেগুনা চালকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
গ্রেপ্তারের সময় আসামিদের কাছ থেকে ৫৩টি ছিনতাই করা মোবাইল ফোন, ৯টি সুইচ গিয়ার, ১০টি এন্টিকাটার, ১০টি ক্ষুর, ৭টি চাকু, ২টি চাইনিজ কুড়াল, ৪টি রামদা এবং চাঁদা সংগ্রহের ১ লাখ ২ হাজার ৫৩৩ টাকা উদ্ধার করা হয়।