ইউরোপে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত এক দশক ধরেই মুসলমানদের ওপর হামলা, ঘৃণাসূচক বক্তব্য ও হুমকির ঘটনা বাড়ছেই। শুধু তাই নয়; কখনও ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদের (স.) বিকৃত কার্টুন আঁকা হচ্ছে। আবারও কখনও পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে আল্লাহর পবিত্র বাণী ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব পবিত্র কোরআন পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।
সম্প্রতি সুইডেনে আবারও কোরআন পোড়ানোর মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। আল্লাহর কিতাবের এ অবমাননার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে মুসলিম বিশ্ব। প্রতিবাদ জানিয়ে উত্তর ইউরোপীয় দেশটির বিভিন্ন শহরে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ চলছে। সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরান, মিসর ও পাকিস্তানসহ মুসলিমপ্রধান বহু দেশ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক কোরআন পোড়ানোর ঘটনাটি ঘটিয়েছে সুইডেনের স্ট্রাম কুর্স নামের একটি কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দল। ইংরেজিতে দলটিকে ‘হার্ড লাইন’ বলে ডাকা হয়। এ সংগঠনটি বেশ আগে থেকেই অভিবাসনবিরোধী ও ইসলামবিদ্বেষী বলে পরিচিত। দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন রাসমুস পালুডান নামের ড্যানিশ বংশোদ্ভূত একজন সুইডিশ নাগরিক।
৪০ বছর বয়সী রাজনীতিক ও আইনজীবী পালুডান মুসলিম ও অভিবাসনবিরোধী এজেন্ডা নিয়ে ২০১৭ সালে তার কট্টরপন্থী দল স্ট্রাম কুর্স প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকেই দলটি সুইডেনে ইসলাম নিষিদ্ধ ও পশ্চিমা নয়, এমন লোকজনকে বিতাড়িত করার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এক ভিডিও বার্তায় রাসমুস বলেন, ‘ইসলাম ও মুসলিমরা হচ্ছে আমাদের শত্রু। এই পৃথিবীতে যদি একজন মুসলিমও না থাকেন, তাহলে খুব ভালো হবে। তাহলে আমরা চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাব।’
সুইডেনের ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় স্ট্রাম কুর্স। কিন্তু একটি আসনেও জয় পায়নি। আগামী ২০২৩ সালের জুনে নির্বাচনে ফের লড়বেন বলে পরিকল্পনা করছেন রাসমুস। তার নেতৃত্বেই গত ১৪ এপ্রিল সুইডেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় লিঙ্কোপিং শহরে পবিত্র কোরআনের একটি কপি পোড়ায় কট্টরপন্থী গোষ্ঠীটি। শুধু তাই নয়; আগামীতে আরও কোরআন পোড়ানোর ঘোষণা দেন রাসমুস পালুডান।
ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এখনই কোরআন পোড়ানোর উপযুক্ত সময়।’ সেই সঙ্গে ঘোষণা দেন, এবার তারা পবিত্র গ্রন্থের ওপর ‘শূকরের রক্ত’ ঢালবে।
রাসমুসের এ ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে রাজধানী স্টকহোমসহ সুইডেনের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয় এবং এখনও তা অব্যাহত। পবিত্র কোরআন পোড়ানো ও মৃসলিমদের অবমাননা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে আসছে বিক্ষোভকারীরা।
পৃথিবীর সব ধর্মগ্রন্থই নিজ নিজ অনুসারীদের কাছে অতি মর্যাদা ও সম্মানের বস্তু। তাই ধর্মগ্রন্থ অবমাননা সব ধর্মে নিন্দনীয়। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পঠিত ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআন। ইসলাম ধর্মে কোরআন অবমাননা ও অমর্যাদা মারাত্মক অপরাধ ও চরম সীমা লঙ্ঘন।
পবিত্র কোরআন মুসলিম জাতির মর্যাদার চাবিকাঠি। কোরআনের সঙ্গে যুগে যুগে যে-ই সংশ্লিষ্ট হয়েছেন, আল্লাহ তারই মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। হযরত জিব্রাইল (আ.) পবিত্র কুরআনের বার্তা বহন করেছেন। এর ফলে আল্লাহ তাকে ফেরেশতাদের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান করেছেন। হযরত মোহাম্মদের (স.)-এর ওপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। যার ফলে তিনি তার পূর্ব ও পরের সব মানুষ, এমনকি নবীদেরও নেতায় পরিণত হয়েছেন।
পবিত্র কোরআন আল্লাহ তায়ালার চিরসত্য বাণী। সুতরাং যারাই কোরআন অবমাননায় অংশ নিয়েছেন বা নেবেন তাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে চরম দুর্ভোগ ও ভয়াবহ শাস্তি। যেমনটা কোরআনে বলা হয়েছে, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী মহাপাপীর, যে আল্লাহর আয়াতের তেলাওয়াত শোনে অথচ ঔদ্ধত্যের সঙ্গে (নিজ মতবাদে) অটল থাকে। যেন সে তা শোনেইনি। সুতরাং তাকে ভয়াবহ শাস্তির সুসংবাদ দাও। ’ (সুরা : জাসিয়া, আয়াত : ৭-৮)
মহান আল্লাহ মানবজাতি সৃষ্টি করে সৃষ্টির সেরা জীবের মর্যাদা দিয়েছেন। আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব যদি তার আসল মালিককে ভুলে যায় এবং তার আদেশ-নিষেধ অমান্য করে, তাহলে তার মালিক তার প্রতি শুধু অসন্তুষ্টই হন না, বরং তাকে শাস্তি দিতে বাধ্য হন। তবে আল্লাহ যেহেতু অতিশয় মেহেরবান ও দয়াময়, তাই তিনি তাত্ক্ষণিক শাস্তি প্রয়োগ করেন না। তিনি অবকাশ দেন, বারবার সুযোগ দেন।
তাছাড়া হযরত মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছেন, তার উম্মতকে যেন আগেকার উম্মতের মতো শাস্তি তথা মানবাকৃতিকে বানর, শূকর ইত্যাদির আকৃতিতে রূপান্তর, পাথরের বৃষ্টি, ভূমি উল্টিয়ে দেওয়ার মতো কঠিন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিনষ্ট করা না হয়।
খোদাদ্রোহিতার শাস্তি
মানুষ পাপ করতে করতে যখন সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই আল্লাহর শাস্তি নাজিল হয়। পাপিষ্ঠ ফেরাউনকে আল্লাহ তাআলা তখনই ধরেছেন, যখন সে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: ‘হে মুসা! তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, সে অত্যন্ত উদ্ধত হয়ে গেছে।’ (সুরা ত্বাহা : ২৪)
নমরুদকে আল্লাহ তাআলা তখনই শাস্তি দিয়েছেন, যখন সে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করেছে। অনুরূপভাবে আদ, সামুদ প্রভৃতি জাতিকে তাদের সীমাহীন পাপাচারের কারণে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
বনি ইসরাইলরা আল্লাহর কিতাব তাওরাতকে অস্বীকার করেছে। উত্তম খাদ্য তথা মান্না ও সালওয়ার পরিবর্তে ভূমির উৎপন্ন খাদ্য চেয়েছে। আমালেকা সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আল্লাহর অগণিত নিয়ামত ভোগ করেও অকৃতজ্ঞ থেকেছে।
ফলে তারা চির লাঞ্ছনা ও আল্লাহর ক্রোধে পতিত হয়েছে। আগের নবীদের এসব কাহিনী পবিত্র কোরআনে আলোচনা করে আল্লাহ তাআলা এটিই বোঝাতে চেয়েছেন যে যদি উম্মতে মুহাম্মদী (সা.) ও তাদের মতো পাপাচারে লিপ্ত হয়, তবে তাদের পরিণতিও অনুরূপ হবে এবং একই ভাগ্য বরণ করতে হবে।
খোদাদ্রোহী নমরুদের পরিণতি
জালিম, পাপিষ্ঠ ও অহংকারীদের পরিণতি হল ধ্বংস। এরকমই একজন অহংকারী খোদাদ্রোহী বাদশা ছিল নমরুদ। তার অহংকার এতটাই সীমা লঙ্ঘন করেছিল যে আল্লাহ তার সৃষ্টির ক্ষুদ্রতম একটি জীব দিয়ে তাকে ধ্বংসে করেছিল। যা ইতিহাসের সব খোদাদ্রোহী অহংকারীর জন্য শিক্ষাস্বরূপ।
নমরুদ ছিল ব্যবিলন বা সিনারের (মেসোপোটেমিয়া) রাজা। সে ছিল পৃথিবীর চারজন বড় শাসকের অন্যতম। নমরুদ প্রায় ৪০০ বছর রাজত্ব করে। খ্যাতি ও সম্মানের শিখরে পৌঁছার পর তার মানসিকতায় পরিবর্তন আসে। নিজেকে সে খোদা বলে দাবি করে এবং প্রজাদেরকে তার প্রার্থনা করার আদেশ দেয়। প্রজারাও তাকে উপাস্যরূপে পূজা ও অর্চনা শুরু করে।
এ সময় মানুষকে সঠিক পথের দিশা দিতে আল্লাহ নবী হযরত ইবরাহিমকে (আ.) পাঠান। নমরুদকে তিনি আল্লাহর পথে (ইসলাম) আহ্বান করেন। কিন্তু সে নবীর কথা তো শোনেইনি বরং আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইবরাহিম (আ.) তখন তাকে আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করেন। এরপরও সাবধান না হলে আল্লাহ তাকে ক্ষুদ্র মশা দিয়ে ধ্বংস করে দেন।
ফেরাউনের পরিণতি
‘ফেরাউন ও তার বাহিনী জমিনে অন্যায় অহমিকা প্রদর্শন করেছিল। তারা মনে করেছিল তাদেরকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। সুতরাং আমি তাকে ও তার সৈন্যদেরকে পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করলাম। এবার দেখ, জালিমদের পরিণতি কী হয়ে থাকে! (সূরা: কাসাস ২৮ : ৩৯-৪০)
মিসরের রাজা ফেরাউনের অন্যায়, জুলুম ও খোদা দাবির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন নবী হযরত মূসা (আ.)। তাকে এক আল্লাহ ও সত্যের দাওয়াত দেন। কিন্তু ফেরাউন আরও অহঙ্কারী হয়ে উঠল। নিজের ক্ষমতা ও আধিপত্যের মোহে সে নবী মুসাকে মারতে গিয়ে নিজেই আল্লাহর ক্রোধে ধ্বংস হয়।
কোরআনের দুইটি আয়াতে হযরত মুসা (আ.)-এর প্রার্থনা অনুসারে ফেরাউন ও মিসরবাসীর ওপর যেসব ভয়াবহ শাস্তি অবতীর্ণ হয়েছিল, তাসহ ফেরাউনের হঠকারিতার সংক্ষিপ্ত পরিচয় প্রদান করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে, ফেরাউনের অবাধ্যতার জন্য প্রথমে অজন্মা, শস্যহানি ও দুর্ভিক্ষে মিসর দেশ জর্জরিত হতে থাকে।
কিন্তু ফেরাউন স্বীয় প্রজাসাধারণের করুণ ক্রন্দনে নিরুপায় ও বিষণ্ণ হয়ে হজরত মুসার (আ.) নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। তার প্রার্থনা অনুসারে অজন্মা ও দুর্ভিক্ষ দূরীভূত হয়ে যায়। এরপর ফেরাউন ফের বিদ্রোহ ও অত্যাচার আরম্ভ করে। দিন যায়, ফেরাউনের ঔদ্ধত্য বাড়তে থাকে।
এক পর্যায়ে মূসা নবী ও তার দলবলকে হত্যা করতে ধাওয়া করে। পথিমধ্যে মিসরের নীল নদ দিয়ে মুসা নবী ও বনী ইসরাইল অলৌকিভাবে পার হয়ে যায়। ডুবে মারা যায় ফেরাউন।
হস্তিবাহিনীর করুণ পরিণতি
আজকের ইয়েমেন ৫৭০ সালে অক্সাম সাম্রাজ্য বা ইথিওপীয় সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। ইয়েমেন ছিল গভর্নরশাসিত। কেন্দ্রীয় সরকার তাদের পছন্দের লোকদেরকে ভাইসরয় নিয়োগ দিত। ইয়েমেনের তেমন একজন ভাইসরয়ের নাম আবরাহা আল-আশরাম।
সে ছিল অসহিষ্ণু, উগ্র ও প্রচণ্ড জেদি। মক্কার বাইতুল্লাহর প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও টান তার ভালো লাগত না। সে চাইত, মানুষ দলে দলে তার সিংহাসনের চারদিকে জড়ো হয়ে তাকেই প্রণাম করুক। তাই সে ইয়েমেনের প্রাণকেন্দ্র সানাতে বাইতুল্লাহ থেকে আরও বড়, সাজানো-গোছানো ও নান্দনিক একটি চার্চ প্রতিষ্ঠা করল।
নির্মাণ শৈলিতে তৎকালীন যুগে আলোড়ন সৃষ্টি করার মতোই স্থাপনা ছিল চার্চটি। আরববাসীকে বলা হল, তারা যেন কাবা ঘরে ইবাদতের পরিবর্তে ওই চার্চে এসে ধর্মকর্ম করে। কিন্তু এতে কোনো লাভ হল না। মক্কাবাসীরা বাইতুল্লাহকে তাদের হৃদয়ের মণিকোঠায়ই রেখে দিল। এতে আবরাহা ক্ষিপ্ত হয়ে বাইতুল্লাহকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
আবরাহা প্রথমে অগ্রগামী দল পাঠিয়ে মক্কার যুবক ও উটগুলোকে কবজা করে ফেলে। যাতে প্রতিরোধের কোনো পথ মক্কাবাসীদের না-থাকে। সঙ্গে যুদ্ধ সংক্রান্ত একটি প্রস্তুতিপত্র পাঠায়। তাতে এমন ভয়াবহ যুদ্ধের হুমকি দেওয়া হয়, যা সামাল দেওয়া মক্কাবাসীর পক্ষে কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। এমনকি পুরো আরবের অস্ত্রও যদি এক করা হয়; তবুও আবরাহার অস্ত্রশস্ত্রের অর্ধেক হবে না।
আবরাহা সৈন্যবাহিনীর বিশাল বহর নিয়ে বায়তুল্লাহ তথা কাবাঘর অভিমুখে রওয়ানা হয়। চারদিকে রণঝংকার। আবরাহার যুদ্ধবহরের প্রধান আকর্ষণ ছিল বিশালদেহী হাতি। সে নিজেও এমন হাতির পিঠে চড়ে, যা মক্কার লোকেরা ইতোপূর্বে দেখেনি। আধুনিক যুগের ট্যাঙ্কের মতো ছিল হাতিগুলো। কিন্তু মক্কাবাসী আবরাহার বাহিনীকে বাধা দেওয়ারই চেষ্টা করেনি। কাবার মুতাওয়াল্লি আব্দুল মুত্তালিব শুধু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেন, ‘ঘরের মালিকই শত্রুর হাত থেকে তার ঘর রক্ষা করবেন।’
আবারাহা দলবল নিয়ে মক্কার প্রাণকেন্দ্রে উপস্থিত হল। তা দেখে অধিবাসীরা পাহাড়ের আড়ালে চলে গেল। শুধু নেতৃস্থানীয় কিছু লোক উপস্থিত থাকলেন। পবিত্র কাবাকে ধূলায় পরিণত করতে আবরাহা প্রস্তুত। হঠাৎ পশ্চিমাকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল। ক্ষণিকের মধ্যেই মেঘের মতো কিছু এসে আবরাহার হস্তিবাহিনীকে ঘিরে ফেলল। এটা আসলে মেঘ ছিল না। ছিল অগণিত ছোট ছোট পাখির বিশাল ঝাঁক। একসাথে দলবেঁধে ডানা মেলে উড়ে আসায় মেঘের মতো মনে হয়।
পাখিগুলো দেখতে চড়ুইয়ের মতো। নাম আবাবিল। ঠোঁটে ও পায়ে করে পাথর বয়ে এনেছিল তারা। পাথরের আকার ছিল অনেকটা ছোলার মতো। আবরাহার দল যখন কাবা ধ্বংসের চূড়ান্ত উদ্দেশ্যে পা বাড়াল, তখনই আকাশ থেকে আবাবিল পাথর ফেলতে থাকল। একসাথে পুরো বাহিনীর ওপর পাথরের বৃষ্টি শুরু হল। পাথর যার ওপরই পড়ল, সে-ই লুটিয়ে পড়ল। এভাবে কিছুক্ষণের মধ্যে আবরাহার পুরো বাহিনী খতম হয়ে গেল।
যে বছর এ ঘটনা ঘটেছিল সেই বছরটাকে ইতিহাসে আমুল ফিল বা হস্তির বছর বলা হয়ে থাকে। ওই বছরই হযরত মোহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। পবিত্র কোরআনের সুরা ফিলে হস্তিবাহিনীর এই ঘটনাকে চিত্রায়ন করা হয়েছে এভাবে: আপনি কী দেখেননি, আপনার পালনকর্তা হাতিওয়ালাদের সাথে কীরূপ আচরণ করেছেন? তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের উপর প্রেরণ করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবিল পাখি, যারা তাদের উপর পাথরের কাঁকর নিক্ষেপ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদেরকে করে দেন ভক্ষিত তৃণসদৃশ।’
সড়কে মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র আঁকা কার্টুনিস্টের মৃত্যু
মুসলিমদের প্রবল আপত্তি ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও আল্লাহর নবী হযরত মোহাম্মদের (স) ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছিলেন সুইডিশ কার্টুনিস্ট লার্স ভিক। ২০০৭ সালে তার আঁকা ছবি প্রকাশিত হলে মুসলিমরা ক্ষুব্ধ হন। নবীর ছবি আঁকা ইসলামের দৃষ্টিতে খোদাদ্রোহিতা হিসেবে গণ্য।
লার্স ভিকসের আঁকা সেই ব্যঙ্গচিত্র মুসলিম বিশ্বে এতটাই ক্ষোভ তৈরি করে যে সুইডেনের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ফ্রেডরিক রাইনফেল্ট পরিস্থিতি সামাল দিতে ২২টি মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূতদের সাথে বৈঠক করেন। ব্যঙ্গচিত্রের কারণে হত্যার হুমকির পেয়েছিলেন ভিকস।
এ কারণে তাকে পুলিশী নিরাপত্তা দেওয়া হত। এরপরও বাঁচতে পারেননি তিনি। ২০২১ সালের অক্টোবরে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। খবরে বলা হয়, ভিকস পুলিশের একটি গাড়িতে চড়ে সুইডেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় মার্কইয়ার্ড শহরে ভ্রমণ করছিলেন এবং সেই সময় একটি ট্রাকের সাথে গাড়িটির সংঘর্ষ ঘটে।