দক্ষিণ আন্দামান সাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবার হবার পর রোববার সকাল ছয়টায় ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত নামের তালিকা থেকে এই সামুদ্রিক ঝড়ের নাম দেয়া হয়েছে ‘অশনি’, অশনি নামটি শ্রীলঙ্কার দেয়া। এটি ২০২০ সালে তৈরি তালিকার ১০ নম্বর নাম।
ঘূর্ণিঝড় অশনি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তর হবে বলে জানিয়েছে ‘রিজিওনাল স্পেশালাইজড মেটেরোলজিক্যাল সেন্টার ফর ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ওভার নর্থ ইন্ডিয়ান ওশান’- আর.এম.সি.এস।
ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে চট্টগ্রাম, মংলাসহ সবগুলো সমুদ্রবন্দরে দুই নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় ১,১০০ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে, ১,২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ছানাউল হক মণ্ডল।
চলতি মাসের পাঁচ তারিখ দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয় যা পরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তর হতে পারে বলে আগেই জানিয়েছিলো আবহাওয়া অফিস। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ঝড়টি শক্তিশালী হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
ঝড়টির মধ্যভাগের গতি এখন ঘণ্টায় ৫৪ কিলোমিটার। এটি আগামী ২৪ ঘণ্টায় পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এসে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগে নিয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ‘আর.এম.সি.এস’।
ঘূর্ণিঝড় অশনি বর্তমানে প্রতি ঘণ্টায় ১৬ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঝড়টি আগামী দশ তারিখ পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। দশ তারিখ সন্ধ্যায় ঝড়টি উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ এবং উড়িষ্যা উপকূলে পৌঁছুবে।
আবহাওয়া মডেলগুলো বলছে, উড়িষ্যা উপকূলে পৌঁছুলেও ঝড়টি স্থলভাগে প্রবেশ না করে বাঁক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হবে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, ‘এখন পর্যন্ত ঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলে আসার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় অশনি প্রথমে উড়িষ্যা উপকূলে গিয়ে কিছু দুর্বল হবে, সেখানে থেকে টার্ন নিয়ে আবারও কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করতে পারে ঝড়টি। তখন বাংলাদেশ উপকূলের দিকে আসার একটি শঙ্কা রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা পরে আরও কিছুটা নিশ্চিত হওয়া যাবে সে ব্যাপারে। তাই বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমরা সার্বক্ষণিক ঝড়টির গতিবিধি নজরে রাখছি’।
আবহাওয়া ওয়েবসাইট ‘উইন্ডি’ এর আবহাওয়া মডেলের পূর্বাভাস বলছে, ঝড়টি উড়িষ্যা উপকূলে বৃষ্টি ঝড়িয়ে দুর্বল হয়ে আবারও বাঁক নেবে। তবে এটি আর তখন ঘূর্ণিঝড় আকারে থাকবে না। এদিকে আর.এম.সি.এস বলছে সোমবার ঝড়টির আশে পাশে বাতাসের গতিবেগ থাকবে ৯৫ থেকে ১২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
আরও পড়ুন: রেলমন্ত্রীর ইউটার্ন! টিটিই শফিকুলের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার
মঙ্গলবার ঝড়টি একইরকম ঝড়ো হাওয়া নিয়ে উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে পৌঁছুবে। বুধবার ঝড়টি উপকূল আঘাত হানার সময় ঝড়টির মধ্যভাগে বাতাসের গতিবেগ থাকবে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা যা মূলত সিভিয়ার সাইক্লোন বা প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে পরিচিত।
এরপর ঝড়টি শক্তি হারিয়ে আবারো সমুদ্রে অবস্থান করবে এবং তখন এর মধ্যভাগে বাতাসের গতিবেগ হবে ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা যা সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ের মতোই। তখন এই ঝড়টি উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে বাংলাদেশ উপকূলের কাছাকাছি অগ্রসর হবে।