ক্যানসার মূলত অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনসংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি। এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের সংখ্যা অনেক বেশি। পৃথিবীর সর্বস্তরের মানুষের জন্য এই মরণব্যাধি ক্যানসার সমানভাবে বিশাল আকারের হুমকি। কারণ, প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার সহজে ধরা পড়ে না। আর যখন ধরা পড়ে, তখন শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোনো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।
এই রোগটিকে রুখতে এর সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা শুধু চিকিৎসকদের জানলে চলবে না, কিছু মূল ধারণা আমাদেরও জেনে নিতে হবে, আমাদেরই প্রয়োজনে। যদিও ক্যানসারের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ বা উপসর্গ নেই, তবে চিকিৎসকরা বলছেন, শরীরে ক্যানসার বাসা বাঁধলে এর কিছু সাধারণ প্রতিক্রিয়া প্রায় সব রোগীর ক্ষেত্রেই দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো হলো-
১. ফোলা ভাব: আপনি যদি শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক কোনো মাংসপিণ্ড বা ফোলা ভাব দেখতে পান অথবা মাংস জমাট হতে দেখেন কিংবা এ ধরনের পরিবর্তন বুঝতে পারেন, তবে এটা কিন্তু ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে। তাই দেরি না করে পরামর্শ নিন চিকিৎসকের।
২. মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন: মলে রক্ত, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে কিংবা মলদ্বারে ব্যথা, মলত্যাগের অভ্যাসে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ। তাই এ লক্ষণগুলো থাকলে সতর্ক হতে হবে।
৩. খাবার গিলতে অসুবিধা: অনেক সময়ই নানা ভাইরাস ঘটিত রোগে গলা ব্যথা হয়। তাই খাবার গিলতে অসুবিধা হলে বা খাবার গেলার সময় ব্যথা অনুভূত হলে অনেকে তা উপেক্ষা করেন। বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন, এই সমস্যা গলা, খাদ্যনালী কিংবা পাকস্থলীর ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
৪. হঠাৎ ওজন হ্রাস: কোনো কারণ ছাড়াই যদি আপনার ওজন অপ্রত্যাশিতভাবে কমতে থাকে, তবে এটি অবশ্যই চিন্তার বিষয়। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে। কারণ, এ ক্ষেত্রে এই ওজন কমার নেপথ্যে ক্যানসার থাকলেও থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় ৪০ শতাংশ ক্যানসার রোগীর এই উপসর্গ থাকে। পাশাপাশি শরীরে ব্যথা, খিদে না পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণও দেখা দেয়।
৫. অনবরত কাশি: যে কোনও কাশি তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলেই তা গভীরতর রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। ফুসফুসের ক্যানসারের অন্যতম প্রধান লক্ষণ কাশি। দীর্ঘমেয়াদি কাশিকে অ্যালার্জির সমস্যা ভেবে উপেক্ষা করবেন না।
প্রাথমিক পর্যায়ে একজন ক্যানসার রোগীর মধ্যে এসব উপসর্গ দৃশ্যমান হয়। এই সময় সঠিক ব্যবস্থা না নিলে ক্যানসারের মাত্রা শরীরে বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ পায়। তখন এসব উপসর্গের সঙ্গে দেখা দেয় রক্ত বমি, ক্লান্তিবোধ, হজমে সমস্যা, ত্বকের পরিবর্তন ইত্যাদি। তাই প্রাথমিক পর্যায়ের এ লক্ষণ সমূহে কখনই অবহেলা করবেন না। কেননা, ক্যানসার শনাক্তে দেরি হলে রোগীকে বাঁচিয়ে তোলার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে যায়।