হিলিসহ আশপাশের অঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠগুলো যেন সবুজ আর হলুদ রঙের মাদুর বিছিয়ে রেখেছে। এ যেন গ্রামবাংলার এক অপূর্ব সৌন্দর্য বহন করছে। তার মাঝে কৃষক ও শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা। কে কার আগে ঘরে তুলবেন স্বপ্নের সোনালি ফসল।
সারা দিন মাঠগুলোয় পুরোদমে কৃষক-শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা চলছে। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। কারণ মাঠের অধিকাংশ ধান পেকে গেছে।
কয়েক দিন আগের কালবৈশাখি ঝড়ের আতঙ্ক কৃষকের মধ্যে এখনো বিরাজ করছে। কারণ, এ ঝড়ে অনেক কৃষকের ধান জমিতে পড়ে গেছে। তবে এ পরিস্থিতিতেও ধান ঘরে তুলতে না পারলে ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকরা।
এদিকে ধান কাটার ব্যস্ততায় নতুন করে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। যেসব শ্রমিক অন্য জেলা থেকে এসে ধান কাটতে আগ্রহী, তারা আবার মজুরি বেশি চাইছেন। এতে কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন।
মাঠে কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, কয়েক বছর ধরে ধান আবাদ করে লোকসানে পড়তে হয়েছে। প্রতিবছর বীজতলায় সমস্যা হয় বা ধানে পোকার আক্রমণ হয়। কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে এবার প্রথম থেকে আবহওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। প্রথম থেকেই বাজারে ধানের দাম ভালো যাচ্ছে।
তবে কালবৈশাখি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক বলেন, ‘বাজারে ধানের দাম ভালো, তবে সময়মতো মাঠ থেকে ধান তুলতে পারব কি না, সেটিই দুশ্চিন্তা। কারণ, গেল কয়েকদিন আগে ধানের গাছ থেকে শিষ বের হওয়ার পর হঠাৎ কালবৈশাখি ঝড়ে অনেক কৃষকের ধান মাটিতে পড়ে গেছে। তাতেও ধানের বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। এখন জমি থেকে ধান ঘরে তোলার পালা।’
শ্রমিক সংকটের কথা উল্লেখ করে একজন কৃষক বলেন, মাঠের অধিকাংশ ধান পেকে যাওয়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তাই শ্রমিকের মজুরি বাবদ অনেক বেশি খরচ পড়ছে। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে প্রথমে শ্রমিকদের চার হাজার টাকা দেওয়া হতো, কিন্তু বর্তমানে ৫-৬ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।
মজুরি বেশি নেওয়ার বিষয়ে শ্রমিকরা বলেন, বাজারে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তাতে তো মজুরি বেশি নিতেই হবে। যে টাকা পাই, তা দিয়ে চাল, ডাল, তেল কিনতেই শেষ। চালের দাম বেশি। তেল বা মাছ, মাংসের দামও বেশি। আমরা মাসেও মাংস চোখে দেখি না। খাব তো দূরের কথা।
আরেক শ্রমিক বলেন, ‘খুব ছোট থেকে বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটার কাজ করে থাকি। এর আগে যে মজুরি পেতাম, তা দিয়ে সংসার চালানোর পরও ভবিষ্যতের জন্য কিছু রাখতাম। এখন যা পাই তা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না।’
অপরদিকে উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, গেল কয়েক বছরের তুলনায় এবার ধান চাষের জন্য আবহাওয়া অনেক ভালো। ধানের তেমন কোনো রোগবালাই নেই বললেই চলে। পাশাপাশি ফলনও ভালো হয়েছে। কৃষকরা বাজারে দামও ভালো পাচ্ছেন। তবে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া কৃষক ধান ঘরে তুলতে পারলে লাভবান হবেন।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে ২০-২২ মণ করে ধানের ফলন হয়েছে। প্রতি মণ ধান বাজারে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, গেল বছর এ উপজেলায় ৭ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হলেও এবার বেড়ে তার পরিমাণ ৭ হাজার ১১০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে।