রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বেড়েছে বলে সতর্ক করেছে জার্মানি। জার্মান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী সভেনজা শুলজে শনিবার বিল্ড সংবাদপত্রকে বলেছেন, আকাশ ছোঁয়া খাদ্যের দামের কারণে বিশ্ব একটি তীব্র খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে চলেছে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দেখা না যাওয়া দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এ সময় মন্ত্রী কোভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। খবর আরটি’র।
শুলজে একটি সাক্ষাৎকারে জার্মান ট্যাবলয়েডকে বলেছেন, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি অনুসারে, ‘৩০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ’ ইতিমধ্যেই তীব্র ক্ষুধায় ভুগছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার রিপোর্ট বলছে, ৫৩টি দেশের প্রায় ১৯৩ মিলিয়ন মানুষ ২০২১ সালে অনাহারে-আধপেটে দিনগুজরান করেছে। অর্থাৎ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়েছিল কোটি কোটি মানুষ। চলমান এ খাদ্য সংকটের মধ্যেই ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে পৃথিবীর ‘খাদ্যগুদাম’ খ্যাত ইউক্রেনের যুদ্ধ। ফলে নতুন করে আরও বড় সমস্যার সামনে পড়তে চলেছে বিশ্ব।
শুলজে সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ‘রেকর্ড স্তরে’ পৌঁছেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে খারাপ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হচ্ছি। যার ফলে লাখ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ৬ মে বিবৃতিতে জানায়, বিশ্বের প্রায় আরও সাড়ে চার কোটি মানুষ ক্ষুধার দিকে ঝুঁকছে। কারণ যুদ্ধের পর ইউক্রেনের শস্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তারা কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলি খোলার আহ্বান জানিয়েছে যাতে এই শস্য সরবরাহ বিঘ্নিত না হয়।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘ক্ষুধার মাধ্যমে যুদ্ধ করার’ জন্য অভিযুক্ত করে মন্ত্রী শুলজে মস্কোকে দায়ী করেছেন। তিনি দাবি করেন, রাশিয়া ‘ইউক্রেন থেকে শস্য চুরি করেছে’ এবং এখন রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় কৃষিপণ্যের উপর নির্ভরশীল দেশগুলির সুবিধা নিচ্ছে কেবলমাত্র তাদেরই খাদ্য সরবরাহ করে, যারা ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে রুশপন্থী’।
মন্ত্রী আরও দাবি করেন, বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যার আবাসস্থল ৪০ টি দেশ খাদ্য ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার পদক্ষেপের নিন্দা করেনি। তবে তিনি এই বিবৃতিটিকে সমর্থন করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ সরবরাহ করেননি। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, জার্মানির উচিত জ্বালানি হিসেবে খাবার ব্যবহার বন্ধ করা। জার্মানিতে তথাকথিত জৈব জ্বালানির ৪% পর্যন্ত খাদ্য এবং পশুখাদ্য থেকে তৈরি করা হয়। তিনি বলেন, “এটি শূন্যে নামিয়ে আনা দরকার, এবং শুধু জার্মানিতে নয় বরং সমগ্র বিশ্বেই এটি করা দরকার। জার্মানি “প্রতি বছর উদ্ভিজ্জ তেল থেকে ২.৭ বিলিয়ন লিটার জ্বালানি গাড়ির জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে যা ইউক্রেনের সূর্যমুখী তেল উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক।
জানা গেছে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট তৈরি করেছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে মার্চে গমের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্বের প্রধান গম উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন। বিশ্ব রপ্তানির ৩০ শতাংশ আসে দেশ দুইটি থেকে।
আরও পড়ুন: খাদ্য সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে বিশ্ব
তবে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে, জার্মান কৃষিমন্ত্রী সেম ওজডেমির জোর দিয়ে বলেছিলেন, কিয়েভকে ‘আরো কার্যকর‘ অস্ত্র সরবরাহ করাই বিশ্বকে অনুমিতভাবে আসন্ন ‘বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ’ এড়াতে সাহায্য করবে। তিনি বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষের জন্য মস্কোকে দায়ী করেন।
এদিকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দেশটিতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর তীব্র সম্ভাবনা রয়েছে। মস্কোর বিজয় দিবসের প্যারেডকে সামনে রেখে রাশিয়া এমন পরিকল্পনা করছে বলে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে।