লিচুর রাজ্য হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের সর্বত্রই লিচুর বাগানগুলোতে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে লিচুর গুটিতে রং আসতে শুরু করেছে। চলতি মাসেই বাজারে উঠতে শুরু করবে দিনাজপুরের লিচু।
বাগানের চারদিকে মৌ-মৌ গন্ধ। কোনো কোনো গাছে গুটি থাকলেও বেশির ভাগ গাছেই লিচু লাল আভায় আচ্ছাদিত হতে শুরু করেছে। ভালো ফলন পেতে লিচু চাষি ও যারা বাগান কিনেছেন, তারা বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
দিনাজপুর জেলার লিচুর সুনাম দেশজুড়ে। ১৩ উপজেলার মধ্যে দিনাজপুর সদর, বিরল, চিরিরবন্দর, কাহারোল, বীরগঞ্জ, খানসামা উপজেলায় সিংহভাগ লিচু উৎপাদন হয়।
বিভিন্ন জাতের লিচুর মধ্যে বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি আর দেশি লিচুর গুটি ফলনে নুয়ে পড়েছে গাছের ডালপালা। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই স্থানীয় বাজারে মাদ্রাজি লিচু পাওয়া যাবে বলে জানান বাগান মালিকরা।
এদিকে লিচুর উন্নত জাতের উদ্ভাবনের পাশাপাশি জেলার লিচু চাষিদের পরামর্শ দিয়ে আসছে স্থানীয় কৃষি অধিদফতর। গত বছরের তুলনায় এবার ২৮০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত লিচু চাষ হচ্ছে। গত বছর ৫ হাজার ৭০৭ হেক্টর জমিতে লিচুর ফলন হয়েছিল।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিক ও লিচু ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার মৌসুমের আগে থেকেই অতিরিক্ত ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করেছেন।
দিনাজপুর সদর উপজেলার মাসিমপুর গ্রামের লিচু চাষি ও গবেষক মোসাদ্দেক হোসেন জানান, লিচু চাষের এলাকা দিনাজপুরে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। দিনাজপুরে লিচুগাছে ব্যাপক মুকুল এসেছিল। লিচু চাষে চৈত্র মৌসুমে পর্যাপ্ত সেচের প্রয়োজন হয়। কিন্তু চৈত্রের খরতাপের কারণে চাষিরা লিচুবাগানে পানির সেচ দিতে পারেননি। এছাড়াও দেখা যায়, যে বছর ভালো ফলন হয়, পরের বছর তা কমে যায়। তবে এ বছর ফলন নিয়ে আশাবাদী বলে জানান মোসাদ্দেক হোসেন।
জেলার বিরলের সফিকুল ইসলাম জানান, একটি বড় গাছে ২০-২৫ হাজার এবং ছোট গাছে ১ থেকে দেড় হাজার লিচু পাওয়া যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লিচুবাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি গাছ রয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার মেট্রিক টন।
গত বছর দিনাজপুরে মাদ্রাজি, চায়না, বেদানা, বোম্বাই, কাঁঠালি, হাড়িয়া ও দেশি জাতের লিচুর ফলন ভালো হয়েছিল। সুমিষ্ট হওয়ায় চায়না-থ্রি আর বেদানা লিচুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রকারভেদে প্রতি শ চায়না-থ্রি ৫৫০-৭৫০ টাকা , বেদানা ৫০০-৬০০ টাকা, বোম্বে ২৫০-৩০০ টাকা ও মাদ্রাজি ১৪০-১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়।