পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় পুকুর ভরাটের হিড়িক চলছে। গত এক যুগে এখানে অন্তত দুই হাজার পুকুর ভরাট করা হয়েছে। এর ভয়াবহ বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে গোটা উপকূলজুড়ে। পটুয়াখালী বরগুনা মৎস চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্প পরিচালিত ১৯৯৮ সালের এক জরিপের তথ্যমতে, কলাপাড়ায় মোট পুকুর সংখ্যা ১৭ হাজার এক শ’ ৩৪ টি। এর মধ্যে বড় পুকুর (এক হাজার বর্গ মিটারের বেশি) ছিল ১৫৬৪টি। মাঝারি পুকুর ১০ হাজার ৫৪ টি।
ছোট পুকুর ছিল পাঁচ হাজার দুই শ’ ৭৮টি এবং ডোবা ছিল ২৩৮টি। এছাড়া খাস পুকুর ছিল ১০৮টি। কিন্তু বর্তমানে অর্ধেক পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। ওই তথ্যমতে কলাপাড়া পৌর শহরের পুকুর সংখ্যা ছিল ৬৪০টি। যার দুই তৃতীয়াংশ ভরাট হয়েছে বলে দাবি পৌরবাসীর। লতাচাপলী ইউনিয়নের দৃশ্য একই। সেখানে ওই সময় পুকুর ছিল ১৮৮০টি। যার দুই তৃতীয়াংশ ভরাট করা হয়েছে। কুয়াকাটা পৌরসভা এবং লতাচাপলীতে ব্যক্তি মালিকানাসহ সরকারি খাস পুকুর পর্যন্ত ভরাট করে বিক্রি করা হয়েছে।
কুয়াকাটার মাঝিবাড়ি এবং খাজুরা এলাকায় শরীফপুর এলাকাজুড়ে পুকুরের পাশাপাশি সরকারি অন্তত ৫টি দীর্ঘ খাল ভরাট করে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে কলাপাড়া উপজেলায় যে যেভাবে পারছে পুকুর ভরাট করছে। ভরাট করে বাড়িঘরসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তোলা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি পুকুর ভরাট হয়েছে কলাপাড়া পৌর শহরে। এখানে অন্তত চার শ’ পুকুর ভরাট করা হয়েছে। ড্রেজার লাগিয়ে বালু দিয়ে ভরাট করে সেখানে তোলা হয়েছে স্থাপনা। ফলে পৌরশহরে পৌরসভার পানির সরবরাহ এক দিন বন্ধ থাকলে জনজীবনে দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
নাচনাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় একটি খাস পুকুর ভরাট করে সেখানে এখন ফ্রি- স্টাইলে তোলা হয়েছে স্থাপনা। লতাচাপলীর রাখাইন পল্লী কালাচানপাড়ায় সরকারি খাস পুকুর দখল করে সেখানে বহুতল মার্কেটসহ অসংখ্য স্থাপনা তোলা হয়েছে। এছাড়াও পৌর শহরের এতিমখানা পুকুরটি ভরাট করে সেখানে পৌর ভবন তোলা হয়েছে।
একই অবস্থা ১২ ইউনিয়নের প্রত্যেক গ্রামে। পুকুর ভরাট করে এই অঞ্চলে মানুষ বসবাসের চিরচেনা বাড়িঘরের আদল বদলে ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে বলেছেন, কলাপাড়া উপজেলায় পুকুর ভরাটের কারনে ভূ-উপরিভাগের পানির ব্যবহার আশঙ্কাজনকহারে কমে যাচ্ছে। বাড়ছে ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার।
চাপ পড়ছে গভীর নলকূপের উপরে। ইতোমধ্যে শতাধিক গভীর নলকূপ নষ্ট হয়ে গেছে। পানির স্তর অঞ্চলভেদে তিন থেকে ১০ ফুট নিচে নেমে গেছে। কলাপাড়া পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার জানান, পরিকল্পিতভাবে যেসব পুকুর জনস্বার্থে সংরক্ষণ করা দরকার তা রক্ষার্থে পুনর্খনন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ চিন্ময় হাওলাদার জানিয়েছেন, পুকুর ভরাটে নিরাপদ পানির সঙ্কট রয়েছে। এর ফলে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগব্যধি বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে।