গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নাম উল্লেখ না করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আইনের কাছে তিনি বেআইনি কাজ করায় হেরে গিয়ে এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে, শেখ হাসিনার সরকার, ব্যক্তি শেখ হাসিনা, তার পরিবার, তার বোন শেখ রেহানা, এমনকি সরকারপক্ষের যিনি আইনজীবী ছিলেন, তার প্রতিও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠেন।
তিনি বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, কিছু মহলের প্রতিহিংসা পরায়ণতা এখনো প্রশমিত হয়নি। সেই আইনজীবীর স্ত্রী হিসেবে তাদের প্রতিহিংসার আগুনে আমাকে এখনো পুড়তে হয়। জনমনে প্রশ্ন আছে— সীমিত আয়ের একজন পাবলিক সার্ভেন্ট হয়েও ড. ইউনূস বিশাল অঙ্কের অর্থ ‘ক্লিনটন অনুদান’ হিসেবে দিলেন কীভাবে? এ রকম আরও বহু প্রশ্ন রয়েছে। সেই সব প্রশ্নের জবাবও নিশ্চয়ই একদিন পাওয়া যাবে।
বুধবার (৮ জুন) একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে আনা সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. দীপু মনি বলেন, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি শেখ হাসিনার সরকার খতিয়ে দেখার লক্ষ্যে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। এই উদ্যোগটি সরকার তার কর্তব্য পালনের অংশ হিসেবে করেছিল। কোনও বিশেষ প্রতিষ্ঠান বা কোনও ব্যক্তি বিশেষের প্রতি কোনও ধরনের বিরাগ কিংবা বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে করেনি। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম হতে পারতো। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম যে, দেশগুলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেশ বড় গলায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, উচ্চ কণ্ঠ থাকে।
তিনি বলেন, যারা আমাদের মতো উন্নয়নের জন্য সংগ্রামরত দেশগুলোকে প্রতিনিয়ত স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির ছবক দেন, তাদের নেতৃস্থানীয় একটি রাষ্ট্রের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত এবং তাদের পররাষ্ট্র দফতরের প্রায় উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে আসেন। স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্যে নয়, আসেন স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অনুসন্ধানের যে কাজ আমরা হাতে নিয়েছিলাম, তা বন্ধ করে দিতে। দুর্নীতির অনুসন্ধানকে উৎসাহিত করতে নয়। দুর্নীতির অনুসন্ধানকে বরং বন্ধ করে দিতে তারা চাপ প্রয়োগ করতে আসেন। স্বাভাবিকভাবেই এ রকমের কোনও অযাচিত অন্যায় চাপের কাছে শেখ হাসিনার সরকার নতি স্বীকার করেনি,করতে পারে না।
মন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের জানিয়ে দিই, আমাদের আইনুযায়ী আমরা যে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অধিকার রাখি এবং অনুসন্ধানে তথ্য-প্রমাণ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই রাষ্ট্রদূতসহ সেই দেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট আমার সঙ্গে দেখা করে। আমি তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম এবং ফোন করেও তারা বারবার চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কখনও প্রচ্ছন্নভাবে, কখনও বা স্পষ্টভাবে যে, গ্রামীণ ব্যাংক এবং তার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিষয়ে অনুসন্ধান বন্ধ করা না হলে পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংক যে অর্থায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
দীপু মনি বলেন, এরপরই সব বায়বীয় অভিযোগ উত্থাপন করা হতে থাকে সরকারের বিরুদ্ধে এবং দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। তারা তাদের কথা রেখেছিলেন, কোনও প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, কোনও দাতা সহযোগীকে না জানিয়ে আকস্মিক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করার যে সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাংক নিয়েছিল, সেটিকে তারা বন্ধ করে দেন। অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
ড. ইউনূস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকতে না পেরে তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে, শেখ হাসিনার সরকার, ব্যক্তি শেখ হাসিনা, তার পরিবার, তার বোন শেখ রেহানা, এমনকি সরকার পক্ষের যিনি আইনজীবী ছিলেন, তার প্রতিও প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ওঠেন।
মন্ত্রী বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়— কিছু মহলের প্রতিহিংসা পরায়ণতা এখনও প্রশমিত হয়নি। শেখ হাসিনার প্রতি, তার সরকারের প্রতি, তার পরিবারের প্রতি তো আছেই, এমনকি সেই আইনজীবীর স্ত্রী হিসেবে এবং শেখ হাসিনার একান্ত অনুসারী হিসেবে তাদের প্রতিহিংসার আগুনে আমাকে এখনও পুড়তে হয়। জনমনে প্রশ্ন আছে— সীমিত আয়ের একজন পাবলিক সার্ভেন্ট হয়েও ড. ইউনূস বিশাল অঙ্কের অর্থ ‘ক্লিনটন অনুদান’ হিসেবে দিলেন কীভাবে? এ রকম আরও বহু প্রশ্ন রয়েছে। সেই সব প্রশ্নের জবাবও নিশ্চয়ই একদিন পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, আজ সব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে সব অসত্য আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমাদের পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্বপ্ন আজ সত্যি। শেখ হাসিনাকে, তার পরিবারকে, তার সহকর্মীদেরকে হেয় করা সব প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার সততা, দেশপ্রেম দৃঢ়তা, সাহস, প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতার কাছে পরাজিত হয়েছে সব ষড়যন্ত্র। এই পদ্মা সেতু বাঙালির আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। বাঙালির সাহস আর দৃঢ়তার প্রতীক। এই বিরল সম্মান-মর্যাদায় বাঙালিকে অভিষিক্ত করায় গভীরতম কৃতজ্ঞতা, নিরন্তর ভালোবাসা আর অসীম আকাশসম শ্রদ্ধা জানাই বঙ্গবন্ধুকন্যা, জননেত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে।
বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সমালোচনা সবসময় ভালো। স্বাস্থ্যের পক্ষে অবশ্যই ভালো। তিনি মিষ্টির কথা বলেছেন, অতিরিক্ত মিষ্টি স্বাস্থ্যের পক্ষে কোথাও কোথাও ক্ষতিকর। তেতো কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষে সব সময় ভালো। তবে তা যদি হয় সত্য তেতো। আমরা করল্লা খাই, আমরা নিম খাই সেগুলো স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। কারণ, তার মধ্য অসত্য নেই। কিন্তু যে তেতো ষোলআনাই অসত্যে মোড়া, তা কোনও দিন কারও স্বাস্থ্যের পক্ষে লাভজনক হয়নি, হতে পারে না।
তিনি বলেন, তিনি (রুমিন) বলেছেন, প্রদীপের নিচে অন্ধকার। সত্যি কথাই, প্রদীপের নিচে অন্ধকার। কারণ, তাদের আমলে আমরা প্রদীপের নিচে অন্ধকার কাকে বলে দেখেছি। একজন প্রধানমন্ত্রী, দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা যার হাতে থাকে, যিনি দেশের রক্ষক, তিনি রক্ষক হয়ে এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছিলেন। একে বলে প্রদীপের নিচে অন্ধকার। উনি বলেছেন, টাকা নয়-ছয়ের কথা, এই শব্দগুলো আসলে তাদেরকেই মানায়, যারা নয়-ছয়ে বিশেষজ্ঞ।
দীপু মনি বলেন, বিশ্বব্যাংক ফিরে এসেছিল। আমরা কেন তাদের ঋণ নিলাম না? আত্মসম্মান-আত্মমর্যাদা এ বিষয়গুলো বিএনপি-জামায়াত বুঝবে এটি আমরা প্রত্যাশা করি না। করি না, তার কারণ আছে। যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, যারা উন্নয়নে বিশ্বাস করে না, যারা যুদ্ধাপরাধীদের দোসর, তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে জাতিকে অপমান করে, যারা দুর্নীতিতে দেশকে বার বার চ্যাম্পিয়ন করে, যারা গ্রেনেড মেরে, বোমা মেরে বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়, যারা দেশকে পরমুখাপেক্ষী রাখাকেই শ্রেয় মনে করে, যারা বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়াকেই শ্রেয় মনে করে, দেশের মানুষের ওপর যাদের কোনো আস্থা নেই, তাদের জীবনের কোথাও অন্ততপক্ষে এ আত্মমর্যাদা বা আত্মবিশ্বাস শব্দগুলোর অস্তিত্ব থাকতে পারে না এবং নেই।