বরিশাল: বরিশালে জমি সংক্রান্ত বিরোধে সৎ ভাইয়ের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড চরআবদানী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রতক্ষদর্শীরা জানায়, গত কয়েকদিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে ওই ওয়ার্ডের মৃত আব্দুর রশিদ খানের ৬ ছেলের মধ্যে। মূলত রশিদ খানের দুই বিয়ে হওয়ায় তার প্রথম ঘরের ৫ সন্তান দ্বিতীয় ঘরের ৪ সন্তানকে পৈত্রিক সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে অপরাগত জানায়।
এর প্রতিবাদ জানালে দ্বিতীয় ঘরের রোকন খান ও সোহেল খানকে নানা ভাবে হুমকি প্রদান করেন প্রথম ঘরের রহিম খান (৫০), বাচ্চু খান (৫৫), জসিম খান (৪০) ও শাওন খান (৩০)। পরে গত ১২ জুন সোহেল খান কাউনিয়া থানায় ৪ জনকে বিবাদী করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, তারা সম্পর্কে সৎ ভাই হয়। বিবাদীদের সাথে পূর্ব হইতে তার জমিজমার বিষয় নিয়া বিরোধ চলিয়া আসিতেছে। বাবা মারা যাওয়ার পর তার সৎ ভাইয়েরা তাদেরকে কোন প্রকার পৈত্রিক সম্পত্তি বুঝাইয়া দেয় নাই।
তার পৈত্রিক সম্পত্তি বুঝাইয়া দেওয়ার জন্য বলিলে বিবাদীগণ আজ কাল বলিয়া ঘুড়াতে থাকে। তারা খুব মানবেতর জীবনযাপন করিতেছি। এমতবস্থায় তার আমার বাবার জমিতে একখানা বসত ঘর স্থাপন করিয়াছি। উক্ত বসত ঘর বিবাদীরা ভেঙ্গে ফেলার পায়তারা করিতেছে।
গত ১২জুন আনুমানিক ৬ ঘটিকার সময় কাউনিয়া থানধীন চর আবদানী বসিয়া বিবাদীরা তাকে ঐ ঘর ভেঙ্গে ফেলতে বলে নয় তো তারা ঐ ঘর ভেঙ্গে ফেলবে মর্মে তাকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। থানায় অভিযোগ দায়ের করায় তার সৎ ভাইরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত সোমবার রাতে পশ্চিম চরআবাদানী এলাকায় সোহেলের অটো রিকসা রাখার গ্যারেজটি ভেঙ্গে ফেলে।
এসময় সোহেল তার একমাত্র উপার্জনের মাধ্যমটি রক্ষায় এগিয়ে আসলে জসিম ও শাওনের নেতৃত্বে তারা ৪ ভাইসহ স্থানীয় চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সোহেলের উপর হামলা চালায়। এসময় জসিমের রামদায়ের কোপে সোহেল বিভিন্নস্থানে মারাত্বকভাবে জখম হয়।
এমনকি ঠোঁটের নিচের অংশ পড়ে যায় এবং অপর ভাই রহিম কোদালী দিয়ে সোহেলের মাথায় আঘাত করার পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সোহেল। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসলে তারা স্থানীয় মোতালেবের বাড়ির সামনের পুকুরে রামদা টি ফেলে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা সোহেলকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। কর্তব্যরত চিকিৎসক এই প্রতিবেদককে জানান, তার ঠোটে মারাত্বক জখম হয়েছে।
এমনকি তার মাথার আঘাতের কারনে জ্ঞান ফেরার পরও কাউকে চিনতে পারছে না। এদিকে এ ঘটনার পরে জসিম ও শাওনকে বেলতলা বাজার থেকে আটক করে কাউনিয়া থানা পুলিশ। কিন্তু অদৃশ্য কারনে এক ঘন্টা পরে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এব্যাপারে কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুলের মুঠফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিভিস করেনি। তবে ওসি (তদন্ত) ছগির হোসেন জানান, এব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।
অন্যদিকে গত ১২জুন অভিযোগ দায়েরের পরে সোহেলের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কাউনিয়া থানার এসআইয়ের বিরুদ্ধে। এমনকি সোহলকে তার পৈত্রিক সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আরও ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন এসআই। এব্যাপারে এসআই জাহিদের মুঠোফোনে রিং দিয়ে জানতে চাইলেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি জানায়, আমার বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উল্লেখ্য, সোহেলকে তার পাওনা সম্পত্তি বুঝিয়ে না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পায়তারা চালিয়ে আসছেন রহিম, জসিম, বাচ্চু ও শাওন সহ তার ভাইয়েরা। সোহেল তার পৈত্রিক সম্পত্তি পেতে প্রশাসন সহ সমাজের বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সোহেলের স্ত্রী।
এনিয়ে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার শালিশ বৈঠক হলেও রহিম, জসিম, বাচ্চু ও শাওন সেই বিচার না মেনে জোড়পূর্বক জমি ভোগদখল করে আসছে। এব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।