বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনার সর্বোচ্চ ফোরাম যৌথ পরামর্শ কমিশন বা জেসিসি’র বৈঠক প্রস্তুতি চূড়ান্ত প্রায়। পূর্বনির্ধারিত সূচি মতে আগামী ১৯শে জুন নয়াদিল্লিতে সপ্তমবারের মতো জেসিসি বৈঠকে বসছেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা।
ফিজিক্যাল ওই বৈঠকে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। আর সমান সংখ্যক প্রতিনিধিদল নিয়ে বৈঠক হোস্ট করবেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর।
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তুতির সব কিছু ঠিক থাকলে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে অর্থাৎ আগামী ১৮ই জুন রাতে মন্ত্রী মোমেন দিল্লি পৌঁছাবেন। সূত্র বলছে, এক যুগ ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ অমীমাংসিত এবং স্পর্শকাতর ইস্যুগুলো অত্যাসন্ন বৈঠকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তুলবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য মতে, বৈঠকে ভারতীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে কিছু ‘জটিল’ দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। কূটনৈতিক সূত্র এ-ও বলছে, বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ কনসালটেটিভ কমিশন (জেসিসি) বৈঠকে সাধারণত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়। আসন্ন বৈঠকেও এর ব্যতিক্রম হবে না।
তবে বৈঠক শেষে বরাবরের মতো এবার জয়েন্ট স্টেটমেন্ট বা যৌথ ঘোষণা আসবে কিনা? তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে! এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল বলেন, বৈঠকে প্রায় সব ইস্যুতেই কথা হবে।
আসন্ন জেসিসি বৈঠক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে- এমনটা আশা করে ওই কর্মকর্তা বলেন, এটা নিশ্চিত যে, এবারে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা আরও গভীর করার উপায় নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হবে।
নতুন সিপা চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রের মধ্যে উচ্চ প্রযুক্তি, বেসামরিক পরমাণু শক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে আলোচনা হবে। সেখানে ভারতীয় ঋণের অর্থে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় নিয়েও কথা হতে পারে।
বৈঠকে উভয়পক্ষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষত: বাণিজ্য, কানেকটিভিটি, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুসহ নতুন নতুন অনেক ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতার বিষয় উঠে আসবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সফর চূড়ান্ত করাসহ হাজার হাজার কোটি টাকা আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দেশটিতে গ্রেপ্তার পি কে হালদারকে দ্রুত ফেরানোর বিষয়ে দিল্লির সহযোগিতা চাওয়া হবে।
ওই বৈঠকে অংশ নিতে যাওয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস আগেই বলেন, দ্বিপক্ষীয় এজেন্ডায় যা যা আছে সবই থাকছে।
ট্রেড আছে, কানেকটিভিটি আছে, কমার্স সেক্টর কো-অপারেশন, ওয়াটার কানেকটিভিটি আছে, সেখানে তিস্তা, কুশিয়ারা, ছয়টি অভিন্ন নদীসহ সব থাকছে। এ ছাড়া আইসিটি, ফুড সিকিউরিটি রয়েছে, রিনিউয়েবল এনার্জি, ক্লাইমেট ইস্যুও আছে।
করোনার কারণে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ জেসিসি’র ৬ষ্ঠ বৈঠকটি ভার্চ্যুয়ালি হয়েছিল জানিয়ে সচিব মাশফি বিনতে শামস বলেন, গত বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন। ওই সময় অনেক বিষয় আলোচনা হয়।
ওই সময় আলোচ্য বিষয়ের কোনটার অগ্রগতি কী জেসিসিতে তা পর্যালোচনা করবো। কোনোটার কম অগ্রগতি হলে কেন হয়নি সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে অগ্রগতির প্রতি জোর দেবো।
এ ছাড়াও নতুন নতুন অনেক ক্ষেত্র আলোচনার টেবিলে আসবে। আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করবো। প্রস্তাবিত ‘কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট’ (সিপা) নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মিজ মাশফি বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ে লাভ লোকসানের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, জেসিসি বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত ভারত সফর নিয়ে আলোচনা হবে। চলতি বছরে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করতে পারেন।
বৈঠকে তিস্তা প্রসঙ্গ তোলাসহ আলোচনাধীন কুশিয়ারা নদীর পানি উত্তোলন বিষয়টিতে সুরাহার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের প্রস্তুতির তাগাদা দেবে ঢাকা।
২০১২ সালে নয়াদিল্লিতে প্রথম জেসিসি বৈঠকে বসে বাংলাদেশ-ভারত। গত ১০ বছরে মোট ছয়বার জেসিসি বৈঠক হয়। জেসিসি বৈঠক বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন আগেই বলেন, দিল্লিতে জেসিসি বৈঠককালে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পানি বণ্টনসহ সব দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
তারা (ভারত) আমাদের খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে। আমরা সব সমস্যা উত্থাপন করতে পারি। গত ৩০শে মে জেসিসি বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল, যা শেষ সময়ে এসে পিছিয়ে যায়।