সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা আছে। দেশে সিভিল সার্ভিসকে দুর্বল বানানো হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দল একজন ডিসিকেও বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের লোকজন পক্ষপাতের বদনাম কিনে নিয়েছেন।
শনিবার (১৮ জুন) রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) অষ্টম জাতীয় সম্মেলনে বক্তৃতাকালে এই মন্তব্য করেন তিনি।
ড. আকবর আলি খান বলেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে পারছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পাশের দেশ ভারতে নির্বাচন নিয়ে এমন প্রশ্ন নেই। ভারতে যারা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হন, তারা প্রশাসনের কর্মকর্তা। বাংলাদেশে সিভিল সার্ভিস এখন এত দুর্বল করা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল ডিসিকে বিশ্বাস করে না।
ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ভারতে দুই-তিন মাস ধরে নির্বাচন চলে। ব্যালট বাক্স থাকে ডিসির কাছে। বাংলাদেশে কি এমন একজন ডিসি পাওয়া যাবে, যার কাছে এক রাতের জন্য ব্যালট বাক্স রাখতে রাজি হবে? তারা পক্ষপাতের বদনাম কিনে নিয়েছেন। তাদের সে সাহসও নেই।
আকবর আলি খান বলেন, গণতন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সুশীল সমাজ। সুশীল সমাজ গড়ে না উঠলে গণতন্ত্রের ভিত দুর্বল হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সুশীল সমাজের কাজ জনগণের দৃষ্টি থেকে বিশ্লেষণ করা। সরকার বলছে, সুজন শুধু সরকারের সমালোচনা করে। সুজন যদি সরকারের প্রশংসা করে, তাহলে সমালোচনা করবে কে? সমালোচনা যারা করে, তারা বন্ধু, শত্রু নয়।
দেশের বিভিন্ন খাত সংস্কারে ১০ থেকে ১৫ বছর মেয়াদি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এ নিয়ে তিনি বলেন, আইনের শাসন, সুশাসন ও মেধার মূল্যায়ন করতে হবে। আগামী ৫০ বছরেও এসব সংস্কার হবে না, যদি দাবিগুলো জনগণের পক্ষ থেকে না করা হয়। জনগণই পারে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, যেকোনো শাসনব্যবস্থায় টেকসই দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান শর্ত শাসনকাঠামোর সর্বস্তরে কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিত করা। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ইদানীং কেউ বলেন, আগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র, এটা কোনো কাজের কথা নয়।
দেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ শিক্ষার মানোন্নয়নের বদলে পিছিয়ে যাচ্ছে। নৈতিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক সহযোগিতার মতো সামাজিক পুঁজির ক্ষেত্রে উন্নতির বদলে পিছিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সমাজে স্থানীয় রাজনৈতিক ও ধনাঢ্য শ্রেণির উত্থান হয়েছে, কিন্তু তাদের মধ্যে অনুসরণীয় বৈশিষ্ট্য দেখা যায় না। যুবসমাজের সামনে কোনো আদর্শ ব্যক্তিত্ব নেই। অনিয়ম, দুর্নীতি, পেশিশক্তির উত্থানে সামাজিক পুঁজির অবক্ষয় ঘটেছে।
সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজনের সহ-সভাপতি হামিদা হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সুজনের সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, নির্বাহী সদস্য বিচারপতি আবদুল মতিন, আলী ইমাম মজুমদার, অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান প্রমুখ।