মোবাইল অপারেটরদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার ফলে অবশেষে দেশের বন্যাদুর্গত এলাকায় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে।
সোমবার (২০ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকার মোট এক হাজার ১৪৬টি মোবাইল অপারেটর সাইট পুনরায় সচল করা হয়েছে।
বর্তমানে বন্যাদুর্গত এলাকায় সব অপারেটরদের মোট ৯৭৬টি সাইট বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে নেটওয়ার্কের আওতাবহির্ভূত রয়েছে। তবে সেগুলো সচল করার জন্য জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে, প্রবল ভারীবর্ষণ ও অতিবৃষ্টির ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা বন্যাপ্লাবিত হয়। এর ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হন এই পাঁচ জেলার অধিবাসীরা। এসব এলাকায় দেশের চারটি মোবাইল অপারেটরের মোট ৩ হাজার ৬১৭টি সাইট রয়েছে। বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এসব এলাকায় অবস্থিত অনেক সাইট (বিটিএস) বন্ধ হয়ে যায়।
আইএসপি
সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনাসহ সিলেট বিভাগের অন্যান্য এলাকায় চলমান বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় ওইসব এলাকায় অবস্থিত ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) অপারেটরদের নেটওয়ার্ক অপারেশন্স সেন্টার, পয়েন্ট অব প্রেজেন্স (পিওপি) স্থাপনাসমূহ প্লাবিত ও বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এর মধ্যে যেসব পিওপিতে প্রবেশ করা যাচ্ছে, সেগুলোতে পোর্টেবল জেনারেটর দিয়ে বর্তমানে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। কিছু সংখ্যক পিওপিতে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার জন্য অতিরিক্ত জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুনামগঞ্জসহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় আইএসপি অপারেটরগুলো তাদের টিম পৌঁছানোর ও নেটওয়ার্ক সচল রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আইআইজি
সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনাসহ সিলেট বিভাগের অন্যান্য এলাকার ১৫টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) অপারেটরের মোট ৪৮টি পিওপি আছে, যার অধিকাংশই সচল রয়েছে। তবে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় ইন্টারনেট সংযোগ প্রাপ্তিতে সাময়িকভাবে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিচ্ছে।
এর মধ্যে, যেসব পিওপিতে প্রবেশ করা যাচ্ছে, সেগুলোতে পোর্টেবল জেনারেটর দিয়ে বর্তমানে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। সিলেটের কয়েকটি আইআইজি’র পিওপি ডিজেল জেনারেটরের মাধ্যমে পরিচালনার জন্য একটি অস্থায়ী প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব পিওপিতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অতিরিক্ত ডিজেল চালিত জেনারেটর ও পোর্টেবল জেনারেটর ভাড়া করা হয়েছে।
এনটিটিএন
নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটরদের মধ্যে সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেডের মোট ২৬২টি পিওপি রয়েছে, যার মধ্যে ১৩৭টি বর্তমানে সক্রিয় ও ১২৫টি নিষ্ক্রিয় রয়েছে। বাহন লিমিটেডের ২৯টি পিওআই’র মধ্যে সবগুলোই সক্রিয় রয়েছে এবং ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেডের ছাতকেরটি (সুনামগঞ্জ) ছাড়া সবগুলো পিওআই সক্রিয় রয়েছে। বন্যাপ্লাবিত এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এনটিটিএন সংযোগ প্রাপ্তিতে সাময়িকভাবে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। তবে, বর্তমানে সবগুলো এনটিটিএনেই নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ চালু আছে।
বিটিসিএল
রোববার (১৯ জুন) জেনারেটর রুমের পানি বের করে টেলিটকের জেনারেটর ব্যবহারের জন্য বিকল্প পাওয়ার ক্যাবল স্থাপন করা হয়। দুদিন সার্বক্ষণিক কাজ ও নিরলস প্রচেষ্ঠার ফলে ওই দিন দুপুর ২টায় সিলেটের সঙ্গে ঢাকার টেলিযোগাযোগ আবারও চালু হয়।
বর্তমানে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় বিদুৎ না থাকায় টেলিযোগাযোগ বন্ধ আছে। এছাড়া বন্যায় জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় টেলিযোগাযোগ বন্ধ আছে যদিও জকিগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) নেটওয়ার্ক ডাউন রয়েছে। এছাড়া সিলেটের অন্যান্য উপজেলায় বিটিসিএলের টেলিযোগাযোগ চালু আছে। মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলা ও হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা ছাড়া সবকটি উপজেলায় এ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু আছে।
বন্যায় বিটিসিএলের ছাতক উপজেলার টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাটের অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে বিটিসিএল মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বিটিসিএলের একটি টিম পোর্টেবল জেনারেটর নিয়ে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। ওই টিম সফলভাবে কাজ করতে সক্ষম হলে, আজ (সোমবার) রাতের শেষভাগে কিংবা আগামীকাল সকাল নাগাদ সুনামগঞ্জে বিটিসিএলের নেটওয়ার্ক সচল করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বিএসসিএল
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) গত শনিবার ১২টি ভিস্যাট (খুব ছোট-অ্যাপারচার টার্মিনাল) সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনীর নিকট পাঠিয়েছে, যার মধ্যে হাইটেক পার্ক ক্যাম্পে একটি, ডিসির কার্যালয়ে একটি এবং সার্কিট হাউজে একটি করে চালু করা হয়েছে।
এছাড়াও গত রোববার সিলেট স্থানীয় প্রশাসনের নিকট ২৩টি ভিস্যাট পাঠানো হয়েছে। সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে একটি ভিস্যাট স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া আরও দুটি ভিস্যাট স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গ্রামীণফোন ও রবির বিশেষ প্যাকেজ
সিলেট বিভাগের বন্যাকবলিত এলাকায় গ্রামীণফোন তাদের গ্রাহকদের জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য ফ্রি ১০ মিনিট টকটাইম দিয়েছে। একইভাবে রবিও ফ্রি ১০ মিনিট ও ১০০ এমবি ইন্টারনেট দিয়েছে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) হতে বন্যাকবলিত স্থানসমূহের টেলিযোগাযোগ সেবার সার্বিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের উদ্দেশ্যে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।