আর মাত্র দুইদিন পর পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে ঘিরে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বরিশালের রাজনীতিবিদ, বিশিষ্টজন ও প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা মনে করছেন, পদ্মা সেতুর কল্যানে বাণিজ্যিক নগরী হয়ে উঠবে বরিশাল। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চমক নিয়ে যোগদান করার জন্য ওইসব নেতৃবৃন্দ ব্যস্ত সময় পার করছেন। বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা থেকে আগামী ২৫ জুন লক্ষাধিক নেতাকর্মী নিয়ে পদ্মাপাড়ের বিশাল সমাবেশে অংশগ্রহণ করা হবে। এছাড়া পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে কুয়াকাটা-বরিশাল-ভাঙ্গা মহাসড়কের অধিকাংশ ব্রিজের খুঁটিনাটি সমস্যা সংস্কারসহ রঙের কাজ শেষ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বসে নেই এখানকার প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তাঁরা। নগরীসহ জেলা-উপজেলায় এসকল কর্মসূচি পালন হবে এমটি জানিয়েছেন বরিশাল জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অভিভাবক মন্ত্রী আবুল অহাসানাত আবদুল্লাহর ডাকে সবসময়ই বাকেরগঞ্জের নেতাকর্মিরা উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আসছে। ঠিক সেভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে যাওয়ার জন্য নেতাকর্মিসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে সবাইকে তো নেয়া যাবে না। তারপরও সাড়ে তিন হাজার লোক নিয়ে প্রস্তুত রয়েছি আমরা।
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বাউফল পৌর মেয়র মো. জিয়াউল হক জুয়েল বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের অভিবাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ডাকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে যেতে বহু লোক আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারপরও আড়াই হাজার নেতাকর্মি নিয়ে উদ্বোধনী সভায় অংশ নিব।
ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশ সফল করতে ঝালকাঠি থেকে ৪টি লঞ্চে ৪ হাজার লোক যাবে। এছাড়া বিছিন্নভাবে গাড়িতে আরো একহাজার মানুষ সমাবেশে যোগ দিবেন। এরই মধ্যে এ কার্যক্রমের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।
পিরোজপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী সমাবেশ সফল করতে পিরোজপুর জেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৫ হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যোগ দেবেন। ২৪ জুন পিরোজপুরের বিভিন্ন লঞ্চঘাট থেকে ৬টি বিলাসবহুল লঞ্চ বন্দর ত্যাগ করবে। ২৫ জুন সকাল ৮টায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী সমাবেশে অংশ নেবেন নেতাকর্মীরা। এ সফরের লঞ্চ ভাড়া এবং ১৫ হাজার নেতাকর্মীর চারবেলা খাবারের ব্যয় বহন করা হবে।
ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মঞ্জু মোল্লা বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের জনসভায় ভোলা সদরসহ ৭টি উপজেলা থেকে ১৫টি লঞ্চযোগে ২৫ হাজার মানুষ যোগদান করবেন। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা শেষ করা হয়েছে। এখন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জনসভায় যোগ দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।
বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, বাউফল উপজেলা থেকে লঞ্চযোগে আড়াই হাজার লোক নিয়ে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে যোগ দিব। এজন্য স্থানীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে জেলা ও উপজেলায় ব্যানার-ফেস্টুন- তোরণ নির্মাণসহ আলোকসজ্জা করা হবে। বিভাগ থেকে লক্ষাধিক নেতাকর্মী নিয়ে আমরা পদ্মা পাড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশাল জনসভায় অংশগ্রহণ করব।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে লঞ্চ মালিকদের সাথে বৈঠক শেষ করা হয়েছে। তাঁরা লঞ্চ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেনে। ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুলসহ বিভিন্ন রুটের ৫০টি লঞ্চে বহর নিয়ে জনসভায় যোগ দেয়া হবে। এসব লঞ্চ গৌরনদী, ভোলা, বগা, ঝালকাঠি, ভান্ডারিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থান নিবে। তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, সব শেষে যে লঞ্চটি এসে পৌছাবে, তাঁর সাথে যোগ হয়ে বহর ছাড়া হবে। ২৪ জুন রাতে বরিশাল নদী বন্দর থেকে রাতে লঞ্চ ছাড়া হবে। সেখান থেকে ছেড়ে পদ্মা সেতুর নিচ থেকে সভা স্থলের কাছাকাছি স্থানে গিয়ে লঞ্চগুলো রাখা হবে।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যেভাবে স্বাধীনতার বিজয় অর্জন করেছি। ঠিক তারই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে আরেকটি বিজয় অর্জন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট একে এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বরিশাল সিটি করর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চমক সৃষ্টির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের নিয়ে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। দলের নেতাকর্মিরা সেই অনুসারে কাজ করছি।
ওদিকে বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলে চলছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ক্ষণ গণনার পর্ব। আর এখানেই আনন্দ-উল্লাসের সকল অনুভূতি উপচে পড়ছে। কারণ, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের, উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির সেতু। মাত্র কয়েক মিনিটে পদ্মা পাড়ি আর বরিশাল থেকে তিন ঘণ্টায় ঢাকা। রাজধানীর সঙ্গে সড়কপথে যাতায়াত প্রশ্নে এখন এমনটাই ভাবনা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের। এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করবে পদ্মা সেতু। তাই, এ সেতুর উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঘিরে এখন চলছে প্রতি সেকেন্ডের অপেক্ষা। দক্ষিণের ভাগ্য বদলের চাবিকাঠী হয়ে ওঠা পদ্মা সেতুকে ঘিরে তাই উচ্ছ¡সিত দক্ষিণাঞ্চলবাসী।
বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, বরিশালবাসীর পক্ষে আমরা প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করে তিনি যেমন বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন, তেমনি বুঝিয়ে দিয়েছেন আমাদের দ্বারাও সম্ভব। সেই সঙ্গে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে যুক্ত করে দিয়েছেন বিশ্বের সঙ্গে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে বরিশাল যুক্ত হচ্ছে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে। ফলে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত এখন বরিশালে।
জেলা প্রশাসক বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা ও উপজেলায় আনন্দ র্যালিসহ নানা কর্মসূচী পালিত হবে। এর মধ্যে ২৫ জুন নগরীতে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সকাল ৯টায় সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণ থেকে বণ্যাঢ্য র্যালি বের হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হবে। পরে সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ডিজিটাল ডিসপ্লেতে উপভোগ করা হবে। সেখানে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে আলোচনা সভায় আয়োজন করা হবে। বিকাল ৫ টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বরিশালে বিভাগে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। যথাসময়ে এ কর্মসূচি পালন করার জন্য তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।