পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে একের পর এক নতুন নতুন আধুনিক সব বাস ঢুকছে বরিশালে। এতদিন এ পথে ফেরির বিড়ম্বনা থাকায় বড় কোনো পরিবহন ঢুকতে না পারলেও রোববার (২৬ জুন) সকাল থেকে পদ্মা সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ার পরই এ পথে আসছে বিলাসবহুল বিভিন্ন পরিবহন।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) সকালে বরিশাল নগরীর নতুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় প্রায় আধঘন্টা পর পর ঢাকা থেকে বিলাসবহুল বিভিন্ন পরিবহন এসে থামছে। যাত্রী নামিয়ে এর কিছুক্ষণ পরই আবার যাত্রী নিয়ে ছুটছে ঢাকার পথে।
বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশ, প্রচেষ্টা, এনা, সুপার সনি, গ্রীন সেন্ট মার্টিন, ইউনিক পরিবহনসহ বেশ কিছু নতুন বাস আসছে এ টার্মিনালে। এমন সব পরিবহন এর আগে এ অঞ্চলের মানুষ দেখেননি বলে জানান বাস টার্মিনাল সংশ্লিষ্টরা।
বাস টার্মিনালের একাধিক পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই এ রুটে যাত্রীর চাপ বেড়ে গেছে। ফলে কোম্পানিও এ রুটে পরিবহনের সংখ্যা দ্বিগুণ করে দিয়েছে। প্রতিটি পরিবহন দিনে ১২ থেকে ২০টির অধিক ট্রিপ দিচ্ছে।
বরিশাল-মাদারীপুর ও ফরিদপুর মালিক সমিতির আওতায় পরিচালিত বিএমএফ পরিবহনের বরিশাল ইনচার্জ এম আর নয়ন বলেন, বাস ভাড়া ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চের ডেকের ভাড়ার চেয়েও কম নেওয়া হচ্ছে। তাই যাত্রীরা তাদের গাড়ির দিকেই বেশি ছুটছে। যাত্রী চাপ সামলাতে এখন প্রতিদিন ২০টির মতো গাড়ি পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটে আপ-ডাউন করছে।
BUSহানিফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার আব্দুল সালাম খান বলেন, বরিশাল থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাত্রীদের চাপ বেশি। তাই তারা এ রুটে পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ ট্রিপ বাড়িয়েছে। এখন প্রতিদিন আধঘন্টা পর পর তাদের ১২টির বেশি পরিবহন যাত্রী নিয়ে ছুটছে বলে জানান।
বরিশাল-ঢাকা রুটে নতুন আসা প্রচেষ্টা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মনির হোসেন জানান, আগে ফেরির বিড়ম্বনা থাকায় এ রুটে তাদের কোনো সার্ভিস ছিল না। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সাথে সাথে এ রুটে গাড়ি দেয়া হয়েছে। যাত্রীর সংখ্যাও অনেক ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তবে যাত্রীর চাপ এমন থাকলে এ রুটে পরিবহনের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
ঈগল পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সোহেল জানান, পদ্মা সেতু দেখার জন্যই অনেক যাত্রী ঢাকায় যাচ্ছেন। এ কারণে যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। তাদের ৪০ আসনের প্রতিটি এসি-নন এসি বাস পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে।
সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার আনিসুর রহমান বলেন, আগে যেখানে মাওয়া হয়ে সায়েদাবাদ টার্মিনালে গাড়ি যেত মাত্র ২টি। এখন সেখানে ১০-১২টি (এসি-নন এসি) ট্রিপ দিতে হচ্ছে। আবার গাবতলী টার্মিনালে যেখানে ৭-৮টি ট্রিপ দিতে হত, সেখানে ২টি ট্রিপ বাতিল করতে হয়েছে।
বরিশাল-ঢাকা রুটে নতুন যোগ হওয়া গ্ৰীন লাইন পরিবহনের বরিশালের দায়িত্ব প্রাপ্ত হাসান সরদার বাদশা বলেন, প্রতি ৫০ মিনিট পর পর নন এসি ও দেড় ঘণ্টা পর পর এসি (ইকোনমি ও বিজনেস ক্লাস) বাস ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীর চাপ অনুযায়ী এখন প্রায় ১২টি পরিবহন যাত্রী সেবা দিচ্ছে।
busবাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) বরিশাল বাস ডিপোর ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগে বরিশাল থেকে কাঁঠালবাড়ি পর্যন্ত চলাচল করত বিআরটিসির বাসগুলো। এখন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে ঢাকার গুলিস্তান পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করেছে।
তিনি আরও বলেন, সকাল থেকে প্রতিটি বাসই যাত্রী বোঝাই হয়ে যাচ্ছে। আপাতত বরিশাল ডিপো থেকে ১৪টি এসি বাস দিয়ে এ রুটে যাত্রীসেবা দেওয়া হচ্ছে। কোনো নন এসি বাস নেই। এসি বাসে আসনপ্রতি ভাড়া রাখা হচ্ছে ৫০০ টাকা। তবে যাত্রীর চাপ বাড়লে গাড়ীর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগেই দূরপাল্লার রুটের বাস মালিকদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, যেন এই রুটে দক্ষ ও লাইসেন্সধারী চালক নিয়োগ করা হয়। তাছাড়া আসছে ঈদে আরো বেশি যাত্রীর জন্য আরও বেশি বাস বাড়ানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।