ফুটপাতের ওপর ফেলে রাখা হয়েছে গাড়ির পুরনো ইঞ্জিন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ইঞ্জিনের নাটবল্টু খুলে সব যন্ত্রাংশ আলাদা করে ফেললেন শ্রমিকরা। ইঞ্জিন থেকে পাওয়া যন্ত্রাংশ মহাজনের হাত ঘুরে চলে যাচ্ছে আশপাশের বিভিন্ন ছোট ও মাঝারি দোকানে। গাড়ির পুরনো যন্ত্রাংশের এ এক জমজামাট বাজার। রাজধানীর ধোলাইখালের এটি পুরনো ঐতিহ্য। যুগযুগ ধরে চলছে এই কর্মযজ্ঞ।
দেশের ভেতরে চলাচল করা পুরনো গাড়ি এবং যন্ত্রাংশের পাশাপাশি আমদানি করা পুরনো যন্ত্রপাতি আসে ধোলাইখালে। সড়কের একাংশ আর ফুটপাত দখল করে সেসব যন্ত্রাংশের মধ্য থেকে ব্যবহারের উপযোগী পার্টসগুলো খুঁজে বের করেন শ্রমিকরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এভাবেই জমজমাট থাকে ধোলাইখাল। তবে, এই বাজার ঘিরে রয়েছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীদের অনৈতিক কর্ম-তৎপরতা। পুরনো অভিযোগ, অনেক চোরাই গাড়িও খালাস হয় এখানে।
চোরাই কারবারিদের সাথে ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে চুরি বা ছিনতাই হওয়া গাড়ির যন্ত্রাংশেরও শেষ ঠিকানা হয় এই ধোলাইখালে। এছাড়া চোরাই চক্র গাড়ি চুরি করে কোনো ওয়ার্কশপে নিয়ে যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে দেয় ব্যবসায়ীদের কাছে।
২৯শে জুন বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা। ধোলাইখালে হাজির হতেই দেখা মিললো পুরনো যন্ত্রপাতির সারি সারি দোকান। ঝুম বৃষ্টির মধ্যেই ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলো বাজারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তবে, ধোলাইখালে এখন আর চুরি করা গাড়ি আসে না বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। অনুসন্ধানে বাজারের দক্ষিণ পাশে দেখা মিললো এমন একটি জায়গা। ওয়ার্কশপের ঠিক পেছনে এটি। চারপাশে জঙ্গল, মাঝখানে চলছে গাড়ির পুরনো যন্ত্রপাতি খোলার কর্মযজ্ঞ। ক্যামেরা হাতে গণমাধ্যম কর্মীদের দেখে জায়গা ছেড়ে আগেই চলে গেছেন কয়েকজন। যারা কাজ করছেন ক্যামেরার সামনে কথা বলতে চাইলেন না। তবে ক্যামেরার বাইরে জানালেন, কীভাবে, কোথায় থেকে আসে গাড়ির এসব যন্ত্রপাতি।
চোরাই গাড়ি খালাসের বিষয়টি অনেকে এড়িয়ে গেলেও সত্যতা পাওয়া গেলো কয়েকজনের কথায়। সরাসরি মুখ খুলতে না চাইলেও ব্যবসায়ীদের কথায় অনেকটা স্পষ্ট যে, এখনো চোরাই গাড়ি খালাস হয় এই বাজারে। এছাড়া প্রায়ই গাড়ি চোরাই চক্রের সদস্যরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। জিজ্ঞাসাবাদে এসব চক্রের সাথে ব্যবসায়ীদের যোগসাজশ আছে বলে জানায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
গত বুধবার গাজীপুরের একটি ওয়ার্কশপ থেকে বিভিন্ন মডেলের পাঁচটি গাড়ির যন্ত্রাংশসহ গাড়ি চোর চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি ছিনতাই করতো। পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে ওই ওয়ার্কশপের পেছনে চোরাই করা বিভিন্ন গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে আলাদা করে অন্যত্র বিক্রি করার জন্য পিকআপে বোঝাই করছিলো। বুধবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে গাড়ির ইঞ্জিন, দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার, একটি পিকআপ, একটি মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ জব্দ করা হয়।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, তাঁরা প্রথমে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে কৌশলে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চুরি করে। এরপর ওয়ার্কশপে চোরাই গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে ঢাকার ধোলাইখালসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে আসছেন।
তবে ধোলাইখালের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কতিপয় অসাধু ব্যবসয়ীদের যোগসাজশে চোরাই কারবারিরা সুযোগ পাচ্ছে। বেশি লাভের আশায় এই অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় কেউ কেউ। চোরাই কারবারি বন্ধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতাও চান ধোলাইখালের ব্যবসায়ীরা।