অংশজুড়ে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বাস্তবিক জীবনের প্রতিদিনকার কার্যক্রম তুলে না ধরতে পারলে যেনো আমাদের চলেই না। কোথায় যাচ্ছি, কি করছি এমনকি কি খাচ্ছি সেটারো আপডেট দিচ্ছি আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ যেনো স্পর্শহীন এক ব্যস্ততম জীবন।
বাস্তবিক জীবনে আমাদের ঘর-বাড়ি আমরা সুরক্ষিত রাখতে সতর্ক থাকা থেকে শুরু করে নানাবিধ নিরাপত্তা বিধান করি, যেমন- দারোয়ান রাখা, উচ্চতর নিরাপত্তার জন্য বাড়িতে লক বা তালা ব্যবহার করা। তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আমাদের নিরাপত্তার বিকল্প নেই। একেকটা একাউন্ট যেনো একেকটা ঘর কিংবা আবাসস্থলের ন্যায়। বাস্তবিক জীবনের ঘর-বাড়ির ন্যায় এক্ষেত্রেও আমাদের অন্তর্নিহিত নানা বিষয়বস্তু থাকে যেগুলোর গোপনীয়তা লঙ্ঘন হলে, ঘটতে পারে বহুবিধ বিপদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একাউন্টগুলোকে স্বর্ণালঙ্কারে পূর্ণ সিন্দুকের সঙ্গে তুলনা করলে, এতে বিদ্যমান সম্পদগুলো চোর ডাকাত হতে রক্ষায়, নিজেদের যেমন সতর্ক থাকবে হবে তেমনি এর প্রভাব যেনো বাস্তবিক জীবনে কোনো কু-প্রভাব না ফেলে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
বাস কিংবা ট্রেনের দেয়ালে লেখা থাকে অপরিচিত কারো দেয়া কোনো কিছু যেনো না গ্রহণ করি, ঠিক তেমনি অনলাইনেও কারো দেয়া লিংকে প্রবেশ না করাই উত্তম। আর যদি পরিচিত কেও-ও দেয়, সেক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে লিংকে প্রবেশ করা উচিৎ, নতুবা ফিশিং লিংকের খপ্পরে হয়তো বেহাত হতে পারে আমাদের একাউন্ট। পরবর্তীতে ব্লাকমেইল সহ নানা জটিলতায় ভুগতে হতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একাউন্টে স্পর্শকাতর কোনো ছবি-ভিডিও সংরক্ষণ না করাই বুদ্ধিমানের কাজ, নচেৎ এগুলো হতে পারে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কারন। শক্ত পাসওয়ার্ড, অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য টু-ফেক্টর অথেনটিকেশন, লগ-ইন এলার্ট সহ সকল নিরাপত্তা বিধান চালু রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একাউন্ট পরিচালনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাইলেই যে কাওকে বুলিং বা হ্যারেজমেন্ট করা যাবে না। ওপেন স্পেস হলেও, বাস্তব জীবনে আমরা কারো সামনে যেমন তার সম্পর্কে কুৎসা-মূলক কিছু না বলে এড়িয়ে চলি তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নিজেকে এই ধরণের কার্যক্রম হতে বিরত রাখতে হবে। আমাদের বাস্তব জীবনে যেমন যেকোনো আইনি কাজে আদালত-কোর্ট রয়েছে, তেমনি অনলাইনে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাওকে হ্যারেজমেন্ট বা কোনো অপরাধ সংগঠিত করলেও আইনের চোখ ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই। বরং অপরাধ অনুযায়ী ভুগতে হতে পারে, কঠোর শাস্তি-ও।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক নিজস্ব ব্যাপার শেয়ার করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়, ধরুন আপনি একটা পোস্ট করলেন যে আগামী বেশ কিছুদিনের জন্য আপনি বাড়িতে থাকবেন্না, বেশ দূরে কোথাও যাবেন এবং আপনার বাড়ি সম্পূর্ণ ফাঁকা। এক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, চোর-ডাকাতরা এই সুযোগে আপনার বাড়িতে হামলা চালাতে পারে। তাদের কিন্তু পথ বাতলে দিয়েছেন আপনি নিজেই!
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুধু যোগাযোগের তাৎপর্যতাই যে বৃদ্ধি পেয়েছে, এমনটা নয়। আমাদের ব্যবসায়ীক নানা প্রচার-প্রসারেও এর অবদান বর্তমানে অনস্বীকার্য। ক্ষুদ্র গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যবসায়ীক প্রসারে এর চেয়ে তড়িৎ ও সহজ উপায় আর একটিও নেই। কিন্তু এক্ষেত্রেও নিরাপত্তা বিধানে সচেতন হতে হবে আমাদের-ই।
সর্বোপরি আধুনিক সময়ের অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, যেখানে আমরা যেনো নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে পারি নির্ভেজাল উপায়ে, থাকতে পারি নিরাপদ, সেজন্য সতর্কতার কমতি নেই। নিজেদের নিরাপত্তা বিধানে নিজেদের সচেতন হতে হবে, চোখ-কান খোলা রাখতে হবে বাস্তবিক জীবনের মতোই। যেকোনো সমস্যায় আইনি সহায়তা নিতে পারেন, টেকনিক্যাল সমস্যায় সে বিষয়ে বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ লোকদের সহায়তা নিতে পারেন। নিজেদের জন্য যেমন নিরাপদ মাধ্যম তৈরী করতে হবে তেমনি নিজের দ্বারা অন্য কারো যেনো ক্ষতি না হয় সেদিকেও সমান তালে নজর রাখাই আদর্শ নাগরিকের কাজ।
আব্দুল্লাহ আল ইমরান
ফাউন্ডার, প্রোবফ্লাই আইটি