বান্ধবীর সঙ্গে এফডিসিতে ঘুরতে এসে অভিনয় শুরু করেছিলেন নাসরিন। পরে জুটি বেঁধেছেন টেলিসামাদ ও দিলদারের সঙ্গে। ওই সময় ছিল তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। তবে ওই সময়ের সিনেমা নিয়ে আজও কেউ কেউ আক্ষেপ করেন। কেননা ওই সময়টাকে বলা হয় বাংলা সিনেমার অশ্লীল যুগ। তিনি আজ এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন সিনেমার অশ্লীল যুগের না বলা অনেক কথা।
১৯৯২ সালে ‘অগ্নিশপথ’ ছবির মাধ্যমে যাত্রা শুরু। তবে দিলদারের জুটি হিসেবে নাসরিনের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। সিনেমার প্রচারে মাইকে মাইকে বলে বেড়াতেন দিলদারের নায়িকা নাসরিন। দর্শকও এই পরিচয়ে গ্রহণ করেছিল নাসরিনকে।
দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে এই জগতে কাজ করছেন নাসরীন। শেষমেষ খেতাব পায় অশ্লীল নায়িকা হিসেবে। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে পুরোপুরি বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহৃত হয়েছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রের সোনালি দিন দেখেছেন। বহু সুপারহিট ও কালজয়ী সিনেমার অংশ তিনি।
সম্প্রতি নিজের বলা না বলা অনেক কথা বলেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তার ক্যারিয়ার নিয়ে দেয়া স্ট্যাটাসের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।
অনেক কথার পরে গিযে মুনমুনকে নিয়ে বোমা ফাটিয়েছেন নাসরিন। তিনি লেখেন,
আমি মুনমুনকে প্রচুর হেইট করতাম। এরা এসে পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছে। কিন্তু দেখলাম যে না ওকে (মুনমুনকে) আসলে প্রযোজকরা হাফপ্যান্ট পরতে বলত। প্রযোজকদের ওই আবদারে মুনমুন কান্না করতো ডিপজল ভাইয়ের বাসায়। বলত, সিনেমায় কাজ করতে এসেছি কী আপনাদের এই নোংরা কাপড় পরার জন্য?
তখন ওরা (প্রযোজকরা) বলত এটা পরলে পরো না পরলে চলে যাও। তখন মুনমুনের ওপর আমার শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে যায়। এরপর থেকে আমি মুনমুনের সাথে কথা বলা শুরু করি। চলচ্চিত্র বাহির থেকে যতটা চকচকে, ভেতরটা আসলে ফাঁকা।
নাসরিন জানিয়েছেন প্রথমে ডিপজলের সাথে গান করতে চাননি। ‘কুত কইরা দিমু’ গানটি ভালো লাগেনি নাসরিনের। পরে ডিপজলের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে তিনি গানটিতে কাজ করেন।
নাসরিন বলেন- শুধু মাত্র চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে অনেক পরিচালক, অভিনিয় শিল্পী ও টেকনিশিয়ানরা মুড়ি খেয়ে থেকেছে। মুখ ফুটে কখনও কিছু বলেনি। কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমার শুটিংয়ে সালমান ভাই আমাকে মুটকি বলায় আমি তাকে ঢিল মেরেছিলাম, তখন আমি উনাকে চিনতাম না।
কেন শুধু দিলদারেই নায়িকা থেকে গিয়েছিলেন সেটাও বলেছেন নাসরিন। ‘শুরুটা হয়েছিল দিলদার ভাইয়ের সাথে তাই আমাকে কেউ নায়িকা হিসাবে নিতে চাইতো না। অনেক নায়ক বলতো ও তো দিলদারের নায়িকা ওর সাথে অভিনয় করবো না। ওর সাথে অভিনয় করলে আমার ক্যারিয়ারের সমস্যা। অভিনয় জীবনে আমাকে কেউ খারাপ করতে পারেনি। দীর্ঘ ২৮ বছরে আমি কারও সাথে আপোষ করিনি। ইন্ডাস্ট্রিতে জোর করে কিছু হয় না।’
আইটেম গানগুলো আমি করতে চাইতাম না। আইটেম গান করতাম শুধু একটাই কারণে, আমি বসুন্ধরায় ফ্লাট কিনেছিলাম। সেই টাকা আমি কিস্তিতে পরিশোধ করতাম। একটানা ২০ বছর আইটেম গানে কাজ করে কখনও ১৫-২০ হাজারের বেশি সম্মানী পাইনি। অশ্লীলতার সময় প্রযোজকরা কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। বাধ্য হয়ে আমরা কাজ করেছি।
আমার ধ্যান-জ্ঞান সব কিছু চলচ্চিত্র। আমাকে কোটি টাকা দিলেও আমি এটা ছাড়তে পারব না। সবার আগে প্রাধান্য দিয়েছি আমি শিল্পী, আমার কাজ আগে।
বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না। আমি ছেলেদের প্রতি বিরক্ত ছিলাম। পরে ওকে (রিয়েল) ভালো লাগে। দেখলাম ওর সাথে আমার সব কিছু মিলে যায়, আমি যা চাই ও আসলে সেরকম, পরে আমি ওকে বিয়ে করতে চাই এবং ২০১২ সালে আমরা বিয়ে করি, এখন আমি দুই সন্তানের মা।
বর্তমানে হাতে তেমন কাজ নেই। সম্প্রতি একটি কাজ করেছি আনান্দ-অশ্রু সিনেমায়। আইটেম গানে আর কাজ করবো না বলেও মন্তব্য করেন নাসরিন।