কৃষ্ণসাগরের বন্দর দিয়ে খাদ্যশস্য রফতানিতে চুক্তি সই করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। এতে আন্তর্জাতিক খাদ্য সংকট লাঘব হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যদিও প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার বৈরিতা কমার কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার (২২ জুলাই) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে আলাদাভাবে যুদ্ধপক্ষগুলো চুক্তিতে সই করেছে। এ সময়ে তারা একই টেবিলে বসা থেকেও বিরত ছিল। দুদেশের পতাকা এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছিল, যাতে তাদের একইসঙ্গে বসতে না হয়।
এমনকি দুই দেশের প্রতিনিধিরা এ সময়ে করমর্দনও করেননি। তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় দুমাসের চেষ্টায় চুক্তিটি এ পর্যায়ে এসেছে। এ চুক্তিকে একটি প্যাকেজ আখ্যায়িত করে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেস বলেন, এতে ইউক্রেন তাদের খাদ্যশস্য বিদেশে রফতানি করতে পারবে। রাশিয়ার খাদ্যশস্য ও সার রফতানিও সহজ হয়ে যাবে
যদিও গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পর রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। রাশিয়ার অর্থনীতিকে আটকে দিতে এমন কোনো উপায় নেই, যা হাতছাড়া করেছে তারা।
গুতেরেসের ভাষায়, এখন থেকে ইউক্রেনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর ওডিসা, চেরনোমর্সক ও ইউজনি থেকে বিপুল পরিমাণে খাদ্যশস্য রফতানি সহজ হয়ে যাবে। চুক্তির বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে একটি সমন্বয় কেন্দ্র স্থাপন করবে জাতিসংঘ। দুপক্ষই যাতে চুক্তির শর্তগুলো পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করে জাতিসংঘ তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, আজ কৃষ্ণসাগরে একটি বাতিঘর দেখা গেছে। সংকটাপন্ন পৃথিবীতে নতুন আশার আলো জেগেছে। কিয়েভ থেকে রিপোর্ট করা আল-জাজিরার সাংবাদিক অ্যালান ফিশার বলেন, ইউক্রেন স্পষ্ট করতে চাচ্ছে যে তারা রাশিয়া না, বরং জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তি করেছে। কারণ জাতিসংঘের মধ্যস্থতায়ই এটি সই হয়েছে।
চুক্তিতে অনেকগুলো শর্ত রয়েছে। তবে কিয়েভ পরিষ্কার করে দিয়েছে, ইউক্রেনের পানিতে কোনো রাশিয়ার জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি ইউক্রেনের কোনো বন্দরে রাশিয়ার কোনো কর্মকর্তাকে অবস্থান করার সুযোগ দেওয়া হবে না।
দুপক্ষের মধ্যে চুক্তি হলেও যুদ্ধের তীব্রতা কমে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যায়নি। এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে গভীর শত্রুতা ও অনাস্থা বিষয়টিও দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়েছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বের খাদ্য রফতানিতে শীর্ষে রয়েছে। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে তারা নিজেদের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের ইস্তাম্বুলে পাঠিয়েছে। এ সময়ে তুর্কিশ প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেসও ছিলেন।