গত ছয় মাসের প্রথম তিন মাসে যেখানে মাত্র ৪ হাজার ভারতীয়কে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন থেকে ভিসা দেয়া হয়; সেখানে গেল তিন মাসে ভিসা দিতে হয়েছে ২৪ হাজার ভারতীয়কে। তিন মাসে এমন ভিসার আবেদন বাড়ার কারণ হিসেবে পদ্মা সেতুর সুফল বলেই মনে করছেন কলকাতার নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস।
একই সঙ্গে তিনি এও বলেন, হঠাৎ করে দুই দেশের মধ্যে পর্যটকদের চাপ বাড়ায় সীমান্তেও ভোগান্তি বেড়েছে। আর সেই ভোগান্তি কমানোর জন্য দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে।
রোববার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যায় কলকাতায় ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত এক গোল টেবিল বৈঠকে পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ উঠে আসে। ওই বৈঠকে অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার, ভারতের বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘের সভাপতি শিশির কুমার বাজোরিয়া প্রমুখ।
এ সময় ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, চলতি সপ্তাহে ঢাকায় দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পর্যায়ের একটি বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে সীমান্তে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা আরও সহজ করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে একেবারে লাইন কমে যাবে সেটাও তিনি মনে করেন না। যদিও এখনকার তুলনায় সীমান্তে ভোগান্তি কমবে বলে দাবি করেন তিনি।
আন্দালিব ইলিয়াস আরও বলেন, পদ্মা সেতুর সুফল শুধু ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বাংলাদেশি পর্যটক আসার মধ্য দিয়েই হয়নি। বরং পদ্মা সেতু হওয়ার পর ভারত থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার প্রবণতাও অনেক গুণ বেড়েছে।
তিনি বলেন, গেল তিন মাসে ২৪ হাজার ভিসা ইস্যু হয়েছে। এর আগের তিন মাসে মাত্র ৪ হাজার ভিসা দিয়েছিলাম আমরা। ছয় মাসের ৩০ হাজার ভারতীয় পর্যটককে কলকাতার বাংলাদেশ ভিসা সেন্টার থেকে ভিসা দেয়া হয়েছে। এটা দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন বলেও মনে করেন এ কূটনীতিক।
গত ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচন হয়। এ সেতু খুলে যাওয়ার পর থেকেই হুহু করে বাড়তে থাকে ভারতের বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা। গড়ে যেখানে আগে ৩ থেকে ৫ হাজার পর্যটক ভারত- বাংলাদেশের পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করতেন, সেখানে এখন গড়ে ৭ থেকে ১০ হাজার পর্যটক যাচ্ছেন। শুধু বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যাই বাড়েনি ভারতে, ভারতের পর্যটকদের বাংলাদেশে যাওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। ত্রিপুরা, আসাম, দিল্লির বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস থেকেও বাংলাদেশের ভিসা চাহিদা বেড়েছে। তবে দুই দেশের মধ্যে পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও বাধ সেধেছে ভারতীয় সীমান্তের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা। অনেক বাংলাদেশি পর্যটকের অভিযোগ, মাত্র ৬ মিনিটে পদ্মা পার হয়ে আসলেও ভারতীয় ইমিগ্রেশনের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করে ভারতের প্রবেশ করতে হচ্ছে। এ অবস্থার দ্রুত উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করলেও পুরোপুরি মিটবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৈঠকে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার সুফল প্রতিবেশী ভারতও পেতে শুরু করেছে। তবে তিনিও সীমান্তের অব্যবস্থার বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেন।
ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সংষের সভাপতি শিশির কুমার বাজোরিয়া বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচনের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বৈঠকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বর্ষ নিয়েও আলেচনা হয়।