ডলার সংকটে দেশে জ্বালানি তেলের আমদানিতে বড় ধাক্কা লেগেছে। চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। দেশে পেট্রোল ও অকটেন এবং ডিজেলের যে মজুদ রয়েছে তা দিয়ে এক থেকে দেড় মাস চলবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও জ্বালাতি তেলের মজুদ নূন্যতম ৬০ দিনের হলে নিরাপদ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে ডিজেলের মজুদ আছে ৪ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন, ফার্নেস অয়েল প্রায় ৮২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। অকটেন মজুদ আছে ১৪ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন, জেট ফুয়েল ৫৮ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন, পেট্রোল প্রায় ১৭ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন এবং কেরোসিন আছে ১৩ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন।
২০২০-২০২১ অর্থবছরের শেষদিকে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেখা দেয় ডলার সংকট। পাশাপাশি গেল মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) বিল পরিশোধের পর নতুন করে ডলার রিজার্ভ নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। গত কয়েক মাসে ডলার সংকটে ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারা এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য এই সংকট তৈরি করেছে। এ কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী জ্বালানি তেল আমদানি ব্যহত হচ্ছে বিপিসির। গত আগস্ট মাসের ৩ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের চাহিদার বিপরীতে বিপিসি ১৯ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ১ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানির ঋণপত্র খুলতে পেরেছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (অপারেশন্স ও পরিকল্পনা) ও অতিরিক্ত সচিব খালিদ আহম্মেদ বাংলাভিশনকে বলেন, ‘আমাদের যে পরিমাণ জ্বালানি আছে তা যথেষ্ট বলা যায়। আমাদের জ্বালাতি তেলের মধ্যে পেট্রোল ৩৫ দিন, ডিজেল ৪৫ দিন, অকটেন ৩৫ দিন, জেট ফুয়েল ৪৬ দিন এবং ফার্নেস অয়েল ৫৮ দিনের মজুদ আছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেল নিয়ে কেউ কেউ গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। জ্বালানি তেল নিয়ে যেন কেউ অবৈধ মজুদ গড়ে তুলতে না পারে সে ব্যাপারে বিপিসি সতর্ক আছে। জ্বালানি তেল আমদানি স্বাভাবিক রাখতে সরকার সচেষ্ট।’
তিনি আরও বলেন, ‘পেট্রোল আমরা নিজেরা উৎপাদন করি। যে কারণে এটা নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই।’
বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির বিভিন্ন ডিপোতে এবং ইস্টার্ন রিফাইনারিতে এসব জ্বালানি তেল সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই মজুদ ক্ষমতা দিয়ে দেশে ৪৫ দিনের জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ করা যায়। যদিও জ্বালানি নীতিমালায় দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ৬০ দিনের মজুদ ক্ষমতা গড়ে তোলার বিষয়টি উল্লেখ আছে।
বিপিসির কর্মকর্তা জানান, দেশে ডিজেলের মজুদ ক্ষমতা ৬ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। অকটেন মজুদ ক্ষমতা ৪৬ হাজার মেট্রিক টন, পেট্রল ৩২ হাজার মেট্রিক টন, কেরোসিন ৪২ হাজার মেট্রিক টন। আর ফার্নেস অয়েল মজুদ রাখা যায় ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
এদিকে চলতি মাসের ২৫ দিনের জ্বালানি তেল বিক্রির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে দৈনিক ডিজেলের চাহিদা প্রায় ১৩ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন। ফার্নেস অয়েলের চাহিদা দৈনিক ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। অকটেন চাহিদা ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। পেট্রলের চাহিদা ১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। এছাড়াও জেট ফুয়েল দৈনিক ১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন করে বিক্রি হয়েছে।
গত ১৭ জুলাই সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ডিজেলের ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার আগে বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। সরকারি এই ঘোষণার পর একদিনের ব্যবধানে ডিজেল বিক্রি কমেছে প্রায় ৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।
বিপিসির কর্মকর্তারা আরও জানান, চলতি বছরের জুন মাসে বিপিসি থেকে বিদ্যুৎ সেক্টরে ডিজেল সরবরাহ করা হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করা হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুন মাসে বিদ্যুৎ সেক্টরে ডিজেল সরবরাহ করা হয়েছিল ৫ লাখ মেট্রিক টন।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিপিসির পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী আগস্ট মাসে ডিজেল আমদানি করা হবে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন, অকটেন আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন এবং জেড ফুয়েল আনা হবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডিজেল আমদানির জন্য বিপিসি বিভিন্ন ব্যাংকে মাত্র ৩টি ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পেরেছে। এই ৩টি এলসির বিপরীতে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা হবে।
বিপিসির কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের অজুহাতে ঋণপত্র খুলছে না।
বিপিসির এই পরিচালক আরও বলেন, ‘বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিপিসির চুক্তি অনুযায়ী জ্বালানি তেলের সরবরাহ লাইন এখনও স্বাভাবিক আছে। সরকার চাইছে দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমাতে। এই লক্ষ্যে আমরা (বিপিসি) কাজ করছি।’