বরিশাল: রাত পেরিয়ে দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই যেন শুরু হতো জীবনযুদ্ধ। এ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল। সেতুর অভাবে বর্ষায় বাড়ত দুর্ভোগ। স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা চরম ভোগান্তিতে পড়ত। ঝড়-বৃষ্টিতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার বিপজ্জনক হয়ে পড়েছিল।
কমছিল না দুর্ভোগ। হঠাৎ নিজ অর্থায়নে বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠী ও উদয়কাঠী ইউনিয়নের সংযোগকারী সাকোঁ করে দিলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। পুরনো সাঁকো ভেঙে নতুন এই সাকোঁ নির্মাণ করেন ভান্ডারিয়া থানায় কর্মরত এসআই জিয়াউর রহমান।
তিনি উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসান বালীর ছেলে। সেতুর জন্য যত দুর্ভোগ- উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের পশ্চিম আউয়ারের গ্রামে গাছ-বাঁশ দিয়ে নির্মিত সাঁকোটি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ।
চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করত। সাঁকোটি দিয়ে ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষ আর স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন যাতায়াত করে। সেতু না থাকায় যাতায়াত, উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে আনা-নেওয়া, অন্যান্য মালামাল বহনে ভোগান্তি ও অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হতো। শুধু একটি বাঁশের সাঁকোই গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, জাতীয় সংসদ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এলে নেতা আর কর্মীদের মুখে শুধু কথার ফুলঝুরি। নির্বাচন শেষ হলে তাদের আর সাক্ষাৎ মেলে না। বছরের পর বছর শুধুই আশ্বাস আর আশ্বাস।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ সরকারের উচ্চমহলে বারবার ধরনা দিয়ে আশ্বাস মিললেও সেতু বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অবশেষে দুর্ভোগ লাগব- উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের পশ্চিম আউয়ারের গ্রামে গাছ-বাঁশ নির্মিত সাঁকোটি দুই বছরের বেশি সময় ধরে ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে ছিল।
গাছ ও বাঁশ দিয়ে নির্মিত সাঁকো দিয়ে লোকজন ঝুঁকি নিয়ে পার হতো। এসআই জিয়াউর রহমান ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসেন। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোটি নিজ উদ্যোগে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী এলাবাসীর দুর্দশার কথা উপলব্ধি করে শুক্রবার সকালে সাকোঁ নির্মাণ শুরু করেন।
শনিবার দিনভর ১২ জন শ্রমিক ও কাঠমিস্ত্রি নিয়ে নির্মাণকাজ শেষ করেছেন। পশ্চিম আউয়ার গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ বলেন, চারটি (সাঁকো) ভাঙা থাকার কারণে নাতি দুই দিন স্কুলে যেতে পারেনি। গ্রামের ছেলে জিয়াউর রহমান নতুন করে সাকোঁ করে দিয়েছে।
এখন সবাই ভালোভাবে যাতায়াত করতে পারব। সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন মৃধা সাংবাদিকদের বলেন, বাজেট ছিল না বলে করে দিতে পারিনি। কেউ করে দিয়েছে কি না জানি না।