যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠান মঞ্চে ভয়াবহ ছুরি হামলার শিকার হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বুকার জয়ী লেখক সালমান রুশদি।
তাঁকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে এবং কথা বলতে পারছেন না। রুশদির সবশেষ শারীরিক অবস্থা জানিয়ে তাঁর সহকারী জানিয়েছেন লেখকরে অবস্থা ভালো নয়। হারাতে পারেন একটি চোখ।
শুক্রবার নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরের শটকুয়া ইন্সটিটিউশনের মঞ্চে বক্তৃতা করতে ওঠার সময় অভিযুক্ত হাদি মাতার হামলা চালান রুশদির উপর।
অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে আমেরিকান গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছেন, অনুষ্ঠান মঞ্চে কারো সঙ্গে পরিচয়ের মুহূর্তে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে তার উপর হামলে পড়েন।
তাদের দাবি, মঞ্চে কারও সঙ্গে পরিচয় করানো হচ্ছিল লেখককে। সেই সময় আচমকা তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এক ব্যক্তি। ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো হয় রুশদিকে।
সে সময় যারা মঞ্চে ছিলেন তারা সঙ্গে সঙ্গেই হামলাকারীকে ধরে ফেলে। কিন্তু ২০ সেকেন্ডের মধ্যেই ১০-১৫ বার কোপানো হয় রুশদিকে। তাঁর ঘাড়ে ও পেটে কোপ মারা হয়।
অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া অতিথি চার্লস স্যাভেনর বলেন, প্রথমে ভাবলাম, কী হচ্ছে এটা! কোনও স্টান্ট নাকি! তার পর যা দেখলাম, ভাবা যায় না।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ক্যাথলিন জোন্স বলেন, হামলাকারী ঝাঁপিয়ে পড়ার কয়েক মুহূর্ত পর আমাদের ভুল ভেঙেছিলো। ততক্ষণে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
হামলার সঙ্গে সঙ্গেই দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহ ছাড়তে বলা হয়। খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ রুশদিকে হেলিকপ্টারে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় হামলাকারীকেও। আপাতত পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন অভিযুক্ত। অভিযুক্ত হামলাকারী নিউজার্সির ২৪ বছরের যুবক হাদি মাতার।
নিউইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে, ইসলাম ধর্মাবলম্বী হাদি শিয়া সম্প্রদায়ের। জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায় হলেও, ইরানি বংশোদ্ভূত। শিয়া কট্টরপন্থায় বিশ্বাসী হাদির আনুগত্য রয়েছে ইরানের প্রতি।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, একাই রুশদিকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন হাদি। তা কার্যকর করার দায়িত্বও একাই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।
রুশদির অনুষ্ঠানের প্রবেশপত্র তিনি কী ভাবে জোগাড় করেছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। উদ্ধার হওয়া প্রবেশপত্রটি ছিলো ফেয়ারভিউর একটি ঠিকানার।
ম্যানহাটন থেকে হাডসন নদী পেরিয়ে ওই ছোট শহরটি হাদি মাতারের সবশেষ ঠিকানা ছিলো দাবি করেছে নিউইয়র্কের পুলিশ।
শুক্রবার রাতেই হাদির ঠিকানায় তল্লাশি চালায় এফবিআই। সেখানে বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার হয়। হাদি ভুয়া নথির সাহায্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়েছিলেন বলেও জেনেছে পুলিশ।
এদিকে, প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, প্রেক্ষাগৃহে ঢোকার সময় দর্শকদের ব্যাগ পরীক্ষা হয়নি, ছিলো না কোনও মেটাল ডিটেক্টরের বালাই। যে যখন পারছে, ঢুকছে।
নিরাপত্তারক্ষীরা কাউকে পরীক্ষা পর্যন্ত করেননি বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। যার মাথার দাম কয়েক লক্ষ ডলার, সেই লেখকের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা কেন শিথিল সেই প্রশ্ন করছেন তারা।
তবে এলাকাটি অত্যন্ত নিরাপদ। প্রতি গ্রীষ্মে লেখক, শিল্পীরা সেখানে জমায়েত হন। চলে নানা আলোচনা অনুষ্ঠান। সেখানে লেখক, শিল্পীদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও চিন্তা করতে হয়নি।
স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশিত হবার পরই সালমান রুশদি মৌলবাদীদের আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে ওঠেন। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু তাঁর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
১৩ বছর পর তা তুলে নেয়া হলেও এখনও তাঁর প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়ে গেছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই লেখক বর্তমানে নিউইয়র্কের বাসিন্দা।