প্রচণ্ড খরায় পুড়ছে যুক্তরাজ্য। দেখা দিয়েছে পানি সংকট। মোকাবিলায় কৃচ্ছতা সাধনের পথ বেছে নিয়েছে দেশটির সরকার। বাড়িতে কিংবা খামারে নিষিদ্ধ করেছে হোসপাইপের ব্যবহার। আর তারই ফলে বিপদে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা। পানি সেচ দিতে না পারায় গাছেই সিদ্ধ হচ্ছে বাগানের আপেল। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রেকর্ড তাপমাত্রায় নাভিশ্বাস অবস্থা ব্রিটিশ নাগরিকদের। দেশটির আবহওয়া ও পরিবেশ বিভাগ চলতি সপ্তাহে ইংল্যান্ডের বিশাল একটা অংশকে খরাপীড়িত হিসাবে ঘোষণা করেছে। তাই পানি ও খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মসূচি হিসাবে হোসপাইপ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এই অনিবার্যতার দরুন বিপাকে পড়েছে কয়েক মিলিয়ন মানুষ।
ইংল্যান্ডের এসেক্সের কাউন্টিতে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে আপেল চাষ করে আসছে টেইলর পরিবার। কিন্তু পরিবারটির ইতিহাসে এক কঠিন অধ্যায় হয়ে হাজির হয়েছে চলতি ২০২২ সাল।
সময় মতো পানি সেচ দিতে না পারায় তাদের ল্যাথকোটস ফার্মের আপেল বাগানের বহু গাছেই আপেল পুড়ে ঝলছে গেছে। আপেলের খোসার কিছু অংশ বাদামি হয়ে গেছে। ফলে এ বছর আপেলের উল্লেখযোগ্য অংশই বিক্রির অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
জুলাই মাসের রেকর্ড দাবদাহে গাছের শাখায় শাখায় ঝুলে থাকা আপেল আক্ষরিক অর্থেই সিদ্ধ হয়ে গেছে। টেইলির পরিবার এখন আরও বড় বিপদের মুখে। সেচের অভাবে গাছেন নিচের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। কারণ এবার বসন্ত ও গ্রীস্মে বৃষ্টি একেবারেই কম হয়েছে। এমনকি গেল শীতে যখন সচরাচর বৃষ্টির পানি মাটিকে আদ্র করে রাখে তখনও যথেষ্ট বৃষ্টি ছিল না।
ইংল্যান্ডে চলতি বছরের জুলাই মাস ছিল ১৯৩৫ সালের পর সবচেয়ে শুষ্কতম মাস। জলাশয়গুলোতে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে, শুকিয়ে যাচ্ছে নদী। টেমসের প্রথম পাঁচ মাইল শুকিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে। পানির সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে দেশের ১৩টি নদী। এ কারণেই আপেলের মতো তৃষ্ণার্ত ফসলের কৃষকদের জন্য সরাসরি আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো আশীর্বাদ বর্ষণের কোনো বিকল্প নেই।
লন্ডনের উত্তর-পূর্বে ৪০ মাইল দূরে অবস্থিত টেলরের আপেল খামারটি। তিনি জানান, প্রতি বছর এভাবে গ্রীষ্ম এলে আপেল চাষ বন্ধ করে দেবেন তিনি। এমনিতেই আপেলের মতো গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দেওয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তার ওপর খরার প্রভাবে বন্ধের হুমকিতে পড়েছে ব্যবসা। টেমস একাই নন, আপেল কিংবা এ ধরনের ফলের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে ইংল্যান্ডের আরও শত শত পরিবার। তারা সবাই খুঁজছেন এ ব্যবসার বিকল্প।