১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের ১৮ জনকে কেবল খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি খুনিরা। ধর্মীয় রীতি মেনে তাদের দাফনও করতে দেওয়া হয়নি। দাফনের পর কবরস্থানে জারি করা হয় অনির্দিষ্টকালের কারফিউ। কবরগুলো সংরক্ষণেও বাধা দিয়েছিলো খুনিদের মদদপুষ্ট বাহিনী।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ঘাতকদের নির্মম বুলেটে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ভবনে শহীদ হন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সেই রাতে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের ও কর্নেল জামিল।
ঘাতকদের বুলেটে আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ভাগনে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ খান রিন্টুসহ আরও অনেকে। দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
এরপর ১৫ আগস্ট ভোর থেকে ১৬ আগস্ট ভোর, ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ধানমন্ডির বাড়িতে পড়ে ছিলো শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, শেখ কামাল, জামাল ও রাসেলসহ অন্যদের মরদেহ। আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ ও শেখ মনির পরিবারের সদস্যদের মরদেহ পড়েছিলো ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে। ততক্ষণে তাদের মরদেহে পচন ধরেছে।
১৬ আগস্ট ভোরের আলো ফোটার আগেই একটি ট্রাকে জড়ো করে তাদের নেওয়া হয় বনানী করবস্থানে। ধর্মীয় রীতি নীতি মেনে গোসল বা জানাজা ছাড়া যার পরনে যে কাপড় ছিলো সে অবস্থাতেই তাদের মাটিচাপা দেওয়া হয়।
এদিকে ১৬ আগস্ট বেলা ১২টায় বঙ্গবন্ধুকে দাফনের জন্য হেলিকপ্টারে টুঙ্গিপাড়ায় নেয়া হয়। সেখানেও তাকে বিনা গোসলে দাফন করতে চাইলে গ্রাসবাসীর আপত্তির মুখে ধর্মীয় রীতি মেনে ৫৭০ সাবান আর রিলিফের মার্কিন কাপড় দিয়ে কবর দেওয়া হয়। বসানো হয় সশস্ত্র পাহারা।
বনানী কবরস্থানের তখনকার সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম রনি জানান, সময়টা তখন এমন ছিলো যে, কোথায় তাদের দাফন হয়েছে, সেই তথ্যটাও জাতিকে জানতে দেওয়া হয়নি।
১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বনানী কবরস্থান মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করা মাওলানা আব্দুর রশিদ জানান, বাধা থাকার পরও অনেকেই আসতো, দোয়া করতো।
ঢাকা মহানগর উত্তর ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এ কাদের খান বলেন, কবরগুলো রক্ষণাবেক্ষনেও বাধা ছিলো। কয়েকবার কবর পাকা করা হলেও ভেঙে দেয় খুনিদের কুড়াল বাহিনীর কর্মীরা।
তবে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর পাল্টাতে থাকে পরিস্থিতি। তখন থেকে ১৫ আগস্টসহ নানা দিবসে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের স্মরণ করা হয়।