রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ০২:১০ অপরাহ্ন
প্রধান সংবাদ :
বরিশালের মুলাদীতে এইচ,এস,সি, পরিক্ষার্থী রাহাত এর উপর সন্ত্রাসীদের হামলা। বাবুগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী কর্মী সমাবেশ । মাদক উদ্ধারসহ ৩টি ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠত্ব পুরস্কার পেলো এয়ারপোর্ট থানা পুলশ । এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ, এলাকায় অভিযানে ৩০ (ত্রিশ) পিচ ইয়াবা সহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক। ঢাকা বরিশাল মহাসড়কে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা । সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীদের পাশে থাকার ঘোষণা জামায়াতের ইসরাইলে নতুন করে মিসাইলের বহর ছুড়ল ইরান ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৬ বরিশালের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোসহ ৩ দাবি পরীক্ষার্থীদের বরিশালে স্ত্রীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্যালিকাকে ধর্ষণচেষ্টা, থানায় অভিযোগ

সালমান রুশদি: যিনি আড়াল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন

একুশে বিডি ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০২২
  • ৯১ জন নিউজটি পড়েছেন

সালমান রুশদি একজন খ্যাতনামা লেখক। বিশেষ করে ঔপন্যাসিক হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে একটানা লিখছেন তিনি। কিন্তু লেখালেখির বিষয়ের কারণে বেশ আলোচিত ও সমালোচিত তিনি। একই সঙ্গে বিতর্কিতও।

লেখালেখির কারণে বরাবরই মৃত্যুর হুমকি পেয়ে আসছেন সালমান রুশদি। যে কারণে বহুদিন রীতিমতো পালিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু বেশিরভাগ সময় আড়ালে থাকলেও কখনও লেখালেখি থামাননি।

সালমান রুশদি একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। পশ্চিমা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয় তিনি। তাকে ব্রিটেনের সর্বকালের সবচেয়ে বিখ্যাত ও সফল ব্রিটিশ লেখকদের একজন মনে করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহাসিক নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা নিজের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’র জন্য ১৯৮১ সালে সাহিত্যের সম্মানজনক পুরস্কার ‘বুকার’ পান তিনি।

তবে ১৯৮৮ সালে চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশের পর বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের ব্যাপক তোপের মুখে পড়েন তিনি। তার সাহিত্যিক জীবনের সবচেয়ে বিতর্কিত এই উপন্যাসের জেরে নজিরবিহীন আন্তর্জাতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় সেই সময়।

বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়। এর বিষয়বস্তুকে নিজেদের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি আঘাত হিসেবে দেখেন তারা। সেই সময় তার বিরুদ্ধে মৃত্যুর হুমকিও দেয়া হয়।

১৯৮৯ সালে রুশদির বিরুদ্ধে কঠোর ফতোয়া ঘোষণা করেন ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি। তার মাথার দাম ঘোষণা করেন ৩০ লাখ ডলার। তার বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রথম নিষিদ্ধ হয়েছিল তার নিজের দেশ ভারতে। প্রাণ বাঁচাতে ফেরারি জীবন শুরু হয় সালমান রুশদির।

যুক্তরাজ্য তাকে আশ্রয় দিতে সম্মত হয়, তবে সরকারের তরফ থেকে শর্ত দেওয়া হয়— নাম পরিচয় গোপন করে থাকতে হবে। উপায়ন্তর না থাকায় সে শর্ত মেনে নিয়ে ‘জোসেফ অ্যান্টন’ছদ্মনামে প্রায় ১৩ বছর ব্রিটেনে ছিলেন তিনি। ১৩ বছরে নিরাপত্তার প্রয়োজনে বেশ কয়েকবার ঠিকানা বদলাতে হয় তাকে।

জন্ম,বেড়ে ওঠা ও লেখালেখি

সালমান রুশদির জন্ম ভারতের মুম্বাইয়ের এক মুসলিম পরিবারে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভের দুই মাস আগে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাত্র ১৪ বছর বয়সে পড়াশুনার জন্য তাকে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়। এখানে রাগবি শহরের একটি স্কুলে ভর্তি হন তিনি। এরপর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

পড়াশুনা শেষ রুশদি আর ভারতে ফেরেননি। যুক্তরাজ্যেই স্থায়ী হন, নেন নাগরিকত্বও। এ সময় ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেন তিনি। এবং উপন্যাস লেখা শুরু করেন। লেখার পাশাপাশি কিছুদিনের জন্য অভিনয়ও করেন। কাজ করেন বিজ্ঞাপনের কপিরাইটার হিসেবেও।

তার প্রথম প্রকাশিত বই ‘গ্রিমাস’। কিন্তু বইটি তেমন সফল হয়নি। তবে গ্রিমার্সের সুবাদে সাহিত্যের কিছু সমালোচক তাকে ‘সম্ভাবনাময় লেখক’ হিসাবে দেখতে শুরু করেন। এরপর দ্বিতীয় বই ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’লেখার জন্য পাঁচ বছর সময় নেন রুশদি।

বইটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং কিছুদিনের মধ্যেই বইটির পাঁচ লাখ কপি বিক্রি হয়ে যায়। বইটি তাকে বুকার পুরস্কারও এনে দেয়। রুশদির তৃতীয় উপন্যাস ‘শেইম’ ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয়। বাইটির বিষয় ছিল পাকিস্তান। এর চার বছর পর নিকারাগুয়া সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখেন ‘দ্য জাগুয়ার স্মাইল’।

দেশে দেশে নিষিদ্ধ রুশদির বই

রুশটির সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে। উপন্যাসটি পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসিত হয় এবং এটার জন্য হুইটব্রেড পুরস্কার পান রুশদি। বিপরীতে বইটি মুসলিমদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এর বিষয়বস্তুকে তারা ‘ধর্মবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করে।

কয়েকটি দেশে নিষিদ্ধও করা বইটি। প্রথম নিষিদ্ধ করে ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকাতে ও নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া পাকিস্তানসহ মুসলিম বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশও একই পদক্ষেপ নেয়া হয়।

কেউ কেউ এটাকে ইসলামের প্রতি অপমান হিসেবে বিবেচনা করেন। তাদের আপত্তি বইয়ের দুটি নারী চরিত্র নিয়ে। ওই দুই চরিত্রে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দুজন স্ত্রীকে জড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা। এর বিরুদ্ধে কোথাও কোথাও বিক্ষোভ-প্রতিবাদও হয়।

১৯৮৯ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ডে বইটির একটি কপি আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। একইসঙ্গে সাংবাদিক ডব্লিউএইচ স্মিথের আয়োজিত এক প্রদর্শনী থেকে বইটি নামিয়ে ফেলতে বাধ্য করা হয়। তবে রুশদি ধর্ম অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

বইটি নিয়ে ভারতে রুশদির নিজ শহর মুম্বাইয়ে দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১২ জন নিহত হন। ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাসে হামলার ঘটনা ঘটে। ১৯৮৯ সালে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খোমেনি।

বিষয়টি নিয়ে কিছু মুসলিম নেতা মধ্যপন্থার আহ্বান জানালেও অন্যান্যরা আয়াতোল্লাহকে সমর্থন করেন। এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো রুশদিকে হত্যার হুমকির নিন্দা জানায়। বইটি ঘিরে মুসলমানদের ভোগান্তি তৈরি হওয়ায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু তারপরও আয়াতোল্লাহ খোমেনি এই ঔপন্যাসিকের হত্যার হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেন।

‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’র প্রকাশক ভাইকিং পেঙ্গুইনের লন্ডন কার্যালয় তছনছ করা হয় এবং নিউইয়র্কের কার্যালয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। মুসলিমদের প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিবাদ শুরু হয়। তাতে সমর্থন জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো। পরে ইইউর সব দেশ সাময়িকভাবে তেহরান থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়।

রুশদির বইয়ের অনুবাদকদের হত্যা

এমন পরিস্থিতিতেও ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ বইটি ইউরোপের পাশাপাশি আমেরিকায় ‘বেস্ট সেলার’ হয়ে ওঠে। এজন্য কেবল এর লেখকই একাই মৃত্যুর হুমকি পাননি। বইটির একাধিক অনুবাদককে হত্যাও করা হয়।

১৯৯১ সালের জুলাইয়ে ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’র জাপানি অনুবাদক খুন হন। অনুবাদক হিতোশি ইগারাশি সংস্কৃতির সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। টোকিওর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত করে তার অফিসের বাইরেই ফেলে রাখা হয়। তার খুনিকে এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।

একই মাসের শুরুতে বইটির ইতালীয় অনুবাদক ইত্তোরে ক্যাপ্রিওলোকে মিলানে নিজ অ্যাপার্টমেন্টে ছুরিকাঘাত করা হয়। যদিও তিনি সেই হামলায় প্রাণে বেঁচে যান। বইটির আরেক অনুবাদক নরওয়ের উইলিয়াম নাইগার্ডকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ১৯৯৩ সালে রাজধানী অসলোতে তার নিজ বাড়ির বাইরে তাকে গুলি করা হয়। কিন্তু ভাগ্যজোরে তিনিও বেঁচে যান।

রুশদির অন্যান্য বই

রুশদির অন্যান্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশুদের জন্য লেখা উপন্যাস ‘হারুন অ্যান্ড দ্য সি অব স্টোরিজ (১৯৯০), প্রবন্ধের বই ‘ইমাজিনারি হোমল্যান্ডস’ (১৯৯১) এবং উপন্যাস ‘ইস্ট, ওয়েস্ট’ (১৯৯৪), ‘দ্য মুরস লাস্ট সিগ’ (১৯৯৫), ‘দ্য গ্রাউন্ড বেনিথ হার ফিট’ (১৯৯৯) ও ‘ফিউরি’ (২০০১)।

‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাসের নাট্যরুপও দেন রুশদি। এমনকি এর মঞ্চায়নের সাথেও জড়িত ছিলেনতিনি। ২০০৩ সালে লন্ডনে এর মঞ্চায়ন হয়। এছাড়া তিনি ‘শালিমার দ্য ক্লাউন’, ‘দ্য এনচ্যাট্রেস অব ফ্লোরেন্স’, ‘টু ইয়ারস এইট মান্থ অ্যান্ড টুয়েন্টি-এইট নাইটস’, ‘দ্য গোল্ডেন হাউস’ ও ‘কুইচোত্তি’ প্রকাশ করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

ব্যক্তিগত জীবনে রুশদি চারটি বিয়ে করেছেন। তার দুই সন্তান রয়েছে। ব্রিটিশ নাগরিক হলেও তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০০৭ সালে ব্রিটিশ রানি তাকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ নিয়ে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে এটি নিয়ে নিজের স্মৃতিকথা সম্বলিত একটি বই প্রকাশ করেন। রুশদির বিরুদ্ধে যে হত্যার ঘোষণা ছিল ১৯৯৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে নেয় ইরানের সরকার। কয়েক বছর আগে তিনি কিছুটা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে শুরু করেন।

কিন্তু মৃত্যুর হুমকি সবসময় তার পেছনে তাড়া করে ফিরেছে। ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি একবার বলেছিলেন, রুশদির বিরুদ্ধে যে ফতোয়া জারি করা হয়েছে, তা বন্দুক থেকে বেরিয়ে যাওয়া বুলেটের মতো। এই বুলেট লক্ষ্যে আঘাত না হানা পর্যন্ত স্থির হবে না।

শুক্রবার (১২ আগস্ট) সকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে ভয়াবহ ছুরি হামলার শিকার হয়েছেন সালমান রুশদি। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। প্রথমে তাকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। তবে এখন তিনি শঙ্কামুক্ত এবং দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

একুশে বিডি ডটকম এর জন্য সারাদেশে সংবাদ দাতা নিয়োগ চলছে
যোগাযোগঃ- 01773411136,01778927878 ekusheybd2021@gmail.com

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন

Salat Times

    Dhaka, Bangladesh
    Sunday, 29th June, 2025
    SalatTime
    Fajr3:47 AM
    Sunrise5:14 AM
    Zuhr12:02 PM
    Asr3:20 PM
    Magrib6:49 PM
    Isha8:17 PM
© All rights reserved © 2019 ekusheybd.com
Theme Customized BY mrhostbd.com
themesba-lates1749691102