আফগানিস্তানে দ্বিতীয়বারের মতো তালেবান শাসন কায়েমের প্রথম বর্ষপূর্তি আজ। গত বছরের ১৫ আগস্ট এক নাটকীয় উত্থানের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের শাসনক্ষমতা দখল করে তালেবান গোষ্ঠী।
ক্ষমতায় আসার পর নিজেদের শাসন ব্যবস্থায় বহু পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালেবান নেতারা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নারীর প্রতি সহনশীল ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার।
তবে এই এক বছরে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি তা বলাই বাহুল্য। উল্টো এই অল্প সময়ে আফগানরা যেনো পিছিয়ে আরও বহু বছর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন আফগান নারী জানিয়েছেন, তাদের চাকরিগুলো পরিবারের পুরুষ সদস্যদের দিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
আফগান অর্থ মন্ত্রণালয়ের ৬০ জনেরও বেশি নারী কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, গত আগস্টে তাদেরকে চাকরি ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। বলা হয় বাড়ি গিয়ে তাদের ভাইয়ের সিভি পাঠিয়ে দিতে, যেন তারা নিজের বোনের পদের জন্য আবেদন করতে পারেন।
তালেবান কর্তৃপক্ষের দাবি, নারীদেরকে এখনও চাকরি করতে দেয়া হচ্ছে। এদের বেশিরভাগই কাজ করেন ‘নারীপ্রধান’ পেশায়, যেমন চিকিৎসা কর্মী, শিক্ষক ও নিরাপত্তাকর্মী। দেয়া হচ্ছে বেতনও, যদিও তা তাদের আসল বেতনের ভগ্নাংশ মাত্র।
আফগানিস্তানে কর্মরত নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের (এনআরসি) কান্ট্রি ডিরেক্টর নেইল তুরনার বলেন, ‘আমরা দেখেছি, এক বছরে কিভাবে দারিদ্র বেড়েছে। অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। মানুষের আয় কমেছে। বিপরীতে বাড়ছে বেকারত্ব, শিশু শ্রমের মতো বিষয়গুলো। আসলে ভবিষ্যত খুবই ধূসর। উঁচুনিচু পথে, সিটবেল্ট ছাড়াই আমরা গাড়ি চালাচ্ছি।’
২০ বছর ধরে তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসা হাজারো সেনাকে ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, তালেবান কর্তৃপক্ষ ১৬০টি বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে। এ ছাড়াও সাবেক সরকার এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি।
সাংস্কৃতিক কাঠামোতে হস্তক্ষেপ না করলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা জানিয়েছিল তালেবান। কিন্তু, এরইমধ্যে আফগানিস্থানে ডয়চে ভেলে, বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বন্ধ করা হয়েছে।
এদিকে, খরার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আফগানিস্তানের কৃষি। চরম দারিদ্র্য আর দুর্ভিক্ষের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছেন অসংখ্য আফগান। যুদ্ধের পরে বিদেশি সহায়তা আসা আবার শুরু হলেও, অনেকেই আর পশ্চিম সাহায্য গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক।