দিনের পর দিন জন্মদাতা পিতার কাছে কতটা নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সানজানা মোসাদ্দিকা, তার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন তার নানী সুফিয়া বেগম।
তিনি বলেছেন, বিয়ের পর থেকেই সানজানার মাকে নির্যাতন করতো পাষণ্ড বাবা শাহীন ইসলাম। সঙ্গে সানজানা এবং ছোট-দুই ভাই-বোনকেও মারধর করতো কারণে-অকারণে। বুঝ হওয়ার পর থেকে এসবের প্রতিবাদ করতো সানজানা। যে কারণে বাবা তাকে সহ্য করতে পারতেন না। তাই নির্যাতনের পরিমাণও বেশিই ছিল সানজানার উপর।
গেল রমজানে গলায় বটি ধরে সানজানাকে জবাই করে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন বাবা শাহীন। পরে মা ও নানীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে প্রাণে বেঁচে যায় সানজানা। শেষ পর্যপন্ত নিজের জীবন দিয়ে বাবার নির্যাতনের প্রমাণ দিতে হয়েছে বলে জানান সানজানার নানী সুফিয়া।
সাজানাদের পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা সুরাইয়া খানম রত্না বাংলাভিশনকে জানান, গেল রমজানে একদিন সন্ধ্যার পর হঠাৎ তাদের বাসায় চিৎকার শুনে ছুটে যান তিনি। গিয়ে দেখেন সানজানার গলার উপর তার বাবা শাহীন বটি ধরে চেপে রেখেছে। পরে তাকে দেখে ছেড়ে দেয় সানজানার বাবা। এই যাত্রায় সানজানা বেঁচে গেলেও শেষ পর্য ন্ত প্রাণে বাঁচতে পারলো না নির্যাতনের শিকার সানজানা।
সানজানার মা জানান, ২০১৭ সালে তার স্বামী শাহীন গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ৫ মাস আগে এই খবর জানার পর জুলাইয়ে শাহীনকে ডিভোর্স দেন সানজানার মা উম্মে সালমা। ডিভোর্সের পরও শাহীন সালমাদের বাসায় নিয়মিত আসতো। এসবের প্রতিবাদ করতো সানজানা। আর এই প্রতিবাদের কারণেই গত শনিবার সানজানা ও তার মাকে মারধর করে শাহীন। মার খেয়ে সানজানার মা প্রতিকার পেতে থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু থানায় গিয়েই খবর পান তার মেয়ে সানজানা ১০ তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
তিনি জানান, এর আগেও একাধিকবার আইনি প্রতিকার পেতে থানায় জিডি করেছিলেন স্বামীর বিরুদ্ধে। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত সানজানাকে হারাতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার রাতে ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে সানজানাকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে তার বাবা শাহীন ইসলামকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বুধবার দক্ষিণখান থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় শাহীনকে। তবুও পরিবারের মাঝে আতংক কাটেনি। উল্টো নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগে নিজের মেয়েকে হারিয়ে যতটা শোকাহত, তার চেয়ে বেশি আতংকে দিন কাটছে উম্মে সালমা ও তার পরিবারের।
গ্রেফতার শাহীন ইসলামের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে পরিবারটি বলছে- বাবাদের কারণে আর কোনো সানজানা যেন অকালে প্রাণ না হারায় সেই আশা তাদের। পরিবারটির নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে দক্ষিণখান থানায় গেলেও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ।
এর আগে গত শনিবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে সানজানা মোসাদ্দিকার লাশ উদ্ধার করা হয়। সানজানা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি ‘সুইসাইডাল নোট’ পাওয়ার কথা গণমাধ্যমে জানিয়েছে পুলিশ।