মেরামতের জন্য গত বুধবার (৩১ আগস্ট) থেকে ইউরোপে গ্যাস রফতানিতে ব্যবহৃত প্রধান পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম-১ বন্ধ করে দেয় মস্কো। পাইপলাইনটি চালু হওয়ার কথা ছিল শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) থেকে। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী সেটি এখনই চালু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রিত এনার্জি জায়ান্ট গ্যাজপ্রম। ফলে, ইতোমধ্যে জ্বালানি সংকটে নাকাল ইউরোপ এবার অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) গ্যাজপ্রমের পক্ষ থেকে বলা হয়, মেরামতের কাজ শেষ না হওয়ায় নর্ডস্ট্রিম-১ পুনরায় চালু করা যাচ্ছে না। একটি কম্প্রেসার স্টেশনের তেলের লাইনে ছিদ্র পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এর একটি ছবিও প্রকাশ করেছে গ্যাজপ্রম। তবে এটি মেরামত করতে কতদিন লাগবে বা কবে নাগাদ নর্ড স্ট্রিম-১ চালু হবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। খবর বিবিসি’র।
রাশিয়া সাময়িক সময়ের জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার কথা বললেও ইউরোপীয়দের শঙ্কা, ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা হস্তক্ষেপের প্রতিশোধ নিতে স্থায়ীভাবেই এ পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে মস্কো।
সেন্ট পিটার্সবাগ শহরের কাছে রাশিয়ার বাল্টিক সাগরের উপকূল থেকে জার্মানির উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইন। ২০১১ সালে চালু হওয়ার পর পাইপলাইনটি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৭ কোটি কিউবিক মিটার গ্যাস রাশিয়া থেকে জার্মানিতে সরবরাহ করা হতো।
এর আগে গত মে মাসে বেলারুশ ও পোল্যান্ড দিয়ে চলে যাওয়া ‘ইয়ামাল’ পাইপলাইন দিয়েও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় রাশিয়া। এ পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিসহ গ্যাস সরবরাহ করা হতো ইউরোপের অন্যান্য দেশেও।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর দেয়া তথ্য বলছে, ইউরোপের অধিকাংশ দেশই শীতকালে ব্যবহারের জন্য এখনও প্রয়োজনীয় গ্যাস মজুত করতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে মস্কো নর্ড স্ট্রিম-১ দিয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় আসন্ন শীত মৌসুমে শিল্পোন্নত ইউরোপীয় দেশগুলোর জ্বালানি সংকটে নাকাল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি ও অন্যান্য শিল্পের কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। ফলে ইতোমধ্যে দেশগুলো মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনৈতিক সংকটে আক্রান্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া স্থায়ীভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে চলমান এ অর্থনৈতিক সংকট খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মন্দায় রূপান্তরিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে আগ্রাসন আখ্যা দিয়ে মস্কোর বিরুদ্ধে স্মরণকালের কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্ব। তাদের অর্থনৈতিক অবরোধের জবাবে রাশিয়া ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেবে, ইউরোপের অনেক দেশই এমন শঙ্কায় ছিল।
জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। যদিও পশ্চিমা অবরোধের জবাবে জ্বালানি সম্পদকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার না করার আশ্বাস দিয়েছে মস্কো। তারপরও কয়েক মাস ধরেই নানা কারণে রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাসের প্রবাহ বিঘ্নিত হয়েছে।
এসবের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাশিয়া লেনদেন জনিত জটিলতা কিংবা কারিগরি ত্রুটিকে অজুহাত হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তবে এবারের নর্ডস্ট্রিম-১ দিয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ইউরোপকে বেশি আতঙ্কিত করছে। কারণ রাশিয়া যদি নর্ডস্ট্রিম-১ দিয়ে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়, তাহলে আক্ষরিক অর্থেই জ্বালানি বিপর্যয় দেখা দেবে নর্ড স্ট্রিমের গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোতে।