এবার জ্বালানি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রাশিয়া ও ইউরোপ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যদি রাশিয়ান গ্যাসের মূল্যসীমা (প্রাইস ক্যাপ) নির্ধারন করে দেয় বা এই ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়, সেক্ষত্রে সমস্ত ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এদিকে বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) পুতিনের ওই হুমকির কয়েকঘণ্টা পরেই ইইউ’র রাশিয়ার গ্যাসের মূল্যসীমা বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ইইউ।
ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার উপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতেই ইউরোপের এই ২৭টি দেশ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশ্লেষকরা।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট। আমাদেরকে রাশিয়ার রাজস্ব কমাতে হবে। যে রাজস্ব দিয়ে পুতিন ইউক্রেইনে তার যুদ্ধের খরচ চালাচ্ছেন।
ফিনল্যান্ডের সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) সংস্থাটি বলছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর গেলো ছয় মাসে জ্বালানি রফতানি করে ১৫৮ বিলিয়ন ইউরো বা ১৫ কোটি ৮০ লাখ ইউরো আয় করেছে রাশিয়া। আর এ আয়ের অর্ধেকের বেশি এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে। রাশিয়ার আগ্রাসনের পর বিশ্বে তেল, গ্যাস ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় ভালো অবস্থানে আছে মস্কো।
ফিনল্যান্ড ভিত্তিক সংস্থাটি আরও বলেছে, চলতি বছরে রফতানির পরিমাণ কম হওয়া সত্ত্বেও জীবাশ্ম জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানি রফতানি থেকে রাশিয়ার বর্তমান রাজস্ব আয় পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে বুধবার পুতিন বলছেন, ইউরোপ রাশিয়ার গ্যাসের দাম বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বোকামি করছে। এতে জ্বালানির দাম আরও বেড়ে যাবে এবং ইউরোপে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেবে।
পুতিন বলেন, ইউরোপের পদক্ষেপ যদি রাশিয়ার স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় তাহলে, আমরা গ্যাস, তেল, কয়লা, হিটিং অয়েল কোনো কিছুই সরবরাহ করব না।
ইউরোপীয় দেশগুলোর অভিযোগ, রাশিয়া তার জ্বালানিকে অস্ত্রের মতো ব্যবহার করছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই এমনটি হচ্ছে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করার জন্য এটি মস্কোর রাজনৈতিক পদক্ষেপ।
জার্মানির স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, গ্যাস সরবরাহের প্রবাহ কমিয়ে দেয়ায় দেশটির উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গ্যাসের কারণে এরইমধ্যে দাম বেড়েছে অন্যান্য জিনিসের।
বরাবরের রাশিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও এরইমধ্যে ইউরোপে মস্কো তাদের প্রধান গ্যাস সরবরাহ পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম ১ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করেছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর পর থেকেই মস্কোর উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো। জবাবে ইউরোপের একাধিক দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে রাশিয়া। চাপে রয়েছে জার্মানিসহ ইউরোপের একাধিক দেশ।