করোনা-বন্যা পেরিয়ে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। অংশ নিয়েছে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এবার হচ্ছে না তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা। প্রশ্ন পদ্ধতি ও মান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল পরীক্ষার্থীদের মধ্যে। কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের শিক্ষা সচিব আবু বকর ছিদ্দিক জানান, প্রশাসন সতর্ক থাকায় প্রশ্নফাঁস বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
ঠান্ডা মাথায় চলছে জীবনের আহ্বান সামনে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। নির্ধারিত সময়ের সাত মাস পর বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পরীক্ষার্থী বসেছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায়। সকাল ১১টা থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষা চলে দুই ঘণ্টাব্যাপী। পরীক্ষা শেষে প্রশ্নপদ্ধতি ও প্রশ্নের মান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানায় পরীক্ষার্থীরা।
এদিকে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে শেষে শিক্ষা সচিব জানান, প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
আগামী বছর পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হবে জানিয়ে শিক্ষা বোর্ড বলছে, আগামী বছরও পরীক্ষা পেছাতে পারে একমাস।
এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় মোট ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ পরীক্ষার্থী রয়েছে। সারা দেশে ২৯ হাজার ৫৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব শিক্ষার্থী মোট ৩ হাজার ৭৯০টি কেন্দ্রে এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি (ভকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
যানজটের কথা বিবেচনা করে এবার সকাল ১০টার পরিবর্তে বেলা ১১টায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এবার বিকেলে কোনো পরীক্ষা থাকছে না। এমসিকিউ পরীক্ষার সময় ২০ মিনিট এবং রচনামূলক পরীক্ষার সময় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। পরীক্ষাকেন্দ্রে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে হবে।
প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র ও সহজ বাংলা প্রথম পত্র। ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলা (আব্যশিক) দ্বিতীয় পত্র ও সহজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ১৯ সেপ্টেম্বর ইংরেজি (আবশ্যিক) প্রথম পত্র এবং পরদিন ২০ সেপ্টেম্বর ইংরেজি (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্র, ২২ সেপ্টেম্বর গণিত, ২৪ সেপ্টেম্বর পদার্থবিজ্ঞান (তত্ত্বীয়), বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং, পরদিন গার্হস্থ্য বিজ্ঞান (তত্ত্বীয়), কৃষি শিক্ষা, সংগীত, আরবি, সংস্কৃত, পালি, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া, চারু ও কারুকলা (তত্ত্বীয়), ২৬ সেপ্টেম্বর রসায়ন (তত্ত্বীয়) এবং পৌরনীতি ও নাগরিকতা ও ব্যবসায় উদ্যোগ, পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর ভূগোল ও পরিবেশ, ২৮ সেপ্টেম্বর জীববিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) ও অর্থনীতি, ২৯ সেপ্টেম্বর হিসাববিজ্ঞান এবং ১ অক্টোবর উচ্চতর গণিত (তত্ত্বীয়) পরীক্ষার মধ্যদিয়ে শেষ হবে এসএসসি পরীক্ষা।
গত ১৯ জুন এসএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় তা পিছিয়ে দেয় সরকার। এবার সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাস করা সিলেবাসে ৩ ঘণ্টার পরিবর্তে ২ ঘণ্টা পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি ও এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও এ বছর করোনা ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। গত বছর এসএসসি পরীক্ষা নেয়া হলেও করোনার কারণে এইচএসসিতে শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেয় সরকার।
এদিকে সারা দেশে বন্যা পরিস্থিতির কারণে পেছানো ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ৬ নভেম্বর। এবার সকাল ও বিকেল দুই ধাপে পরীক্ষা নেয়া হবে। সকালের পরীক্ষা বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এবং বিকেলের পরীক্ষা দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হবে। গত সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এইচএসসি পরীক্ষার সূচি প্রকাশ করেছে।
বৈরী আবহাওয়া কারণে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সময় নিয়ে কেন্দ্রে আসার অনুরোধ জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে এ অনুরোধ জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যান চলাচলে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। এ কারণে পরীক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সময় নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা দেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।