পেলে-ম্যারাডোনা কিংবা হালের মেসি-রোনালদো এদের বিকল্প হয়তো পাওয়া যাবে না। এরা সবাই ছিলেন যে যার সময়ের সেরা। সর্বকালের সেরা কে? সেটাও তর্কসাপেক্ষ। তবে ২০১৩ সালে ওয়ার্ল্ড সকারের নির্বাচিত সর্বকালের সেরা একাদশে পেলে ম্যারাডোনার চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে ছিলেন একজন। তিনি বেকেনবাওয়ার।
এই জার্মান ভদ্রলোককে একেক বিশ্বকাপে দেখা গেছে একেক ভূমিকায়। ১৯৬৪ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন মিডফিল্ডার হিসেবে। কোয়ার্টার আর সেমিফাইনালে ১টি করে গোলও করেন। পুরো টুর্নামেন্টে ৪ গোল করে ব্রোঞ্জ বল জেতেন। তবে এরপরেও সেই বিখ্যাত ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যায় তার দল জার্মানি। হেরে গেলেও পুরো আসরে সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা জিতে নেন বেকেনবাওয়ার।
১৯৭০ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের। নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপে বেকেনবাওয়ারকে দেখা যায় ডিফেন্ডার হিসেবে। ৪৯ মিনিটেই ২ গোলে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ৬৮ মিনিটে গোল করে বেকেনবাওয়ারই ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন জার্মানিকে। শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে ম্যাচটা জিতে নেয় জার্মানি। কিন্তু সেমিতে আবারও ইতালির কাছে হেরে আসর থেকে বিদায় নেয় জার্মানরা।
পরপর দুই বিশ্বকাপের ব্যর্থতায় হাল ছেড়ে দেয়ারই কথা। তবে বেকেনবাওয়ার হাল ছাড়লেন না। ‘একবার না পারিলে দেখ শতবার’ – প্রবাদ বাক্যের মতো তাকে শতবারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি। তৃতীয়বারে প্রচেষ্টাতেই সফল হয়েছিলেন। ১৯৭৪ বিশ্বকাপে ডিফেন্ডার হিসেবে খেলেন এবং জার্মানিকে জেতান বিশ্বকাপ। সেবার সিলভার বল জেতেন বেকেনবাওয়ার।
এই পর্যন্ত বিশ্বকাপের ইতিহাসে মাত্র দুজন খেলোয়াড় তিনবার করে বিশ্বকাপের অলস্টার দলে সুযোগ পেয়েছেন। ১৯৬৬, ১৯৭০ আর ১৯৭৪ বিশ্বকাপের অলস্টার দলে সুযোগ পাওয়া কাইজার সেই দুজন খেলোয়াড়ের একজন।
এ তো গেল তার খেলোয়াড়ি জীবনের কথা। কোচ হিসেবেও শুরুতে সর্বোচ্চ সফলতার খুব কাছে গিয়েও মিস করেছেন। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার বীরত্বের কাছে হার মেনে তার দল রানার্সৎআপ হয়েছিল। ৪ বছর পর আবার প্রতিপক্ষ সেই একই ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। এবার জিতে নিলেন সেই কাঙ্ক্ষিত শিরোপা।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে মাত্র তিনজন মানুষ ‘খেলোয়াড়’ এবং ‘কোচ’ দুই হিসেবেই বিশ্বকাপ জিতেছেন। ব্রাজিলের মারিও জাগালোর পর দ্বিতীয়জন বেকেনবাওয়ার। এই দুজনের পর ২০১৮ সালে এই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন ফ্রান্সের বর্তমান কোচ দিদিয়ের দেশাম।
খেলোয়াড় হিসেবে বেকেনবাওয়ার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন ২ বার।
নেতৃত্বের গুণাবলির জন্য তাকে ‘কাইজার’ বা সম্রাট নামেও ডাকা হতো। ফুটবল রক্ষণের আধুনিক পজিশন ‘সুইপার’ এর জনকও তিনি। তাই বিশ্বকাপ এলেই ঘুরেফিরে আসে কিংবদন্তি বেকেনবাওয়ারের কথা।