বিশ্বের ভয়ংকর মাদক স্কোপোলামিন। অপরাধ জগতে যা পরিচিত ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের শ্বাস’ নামে। পাশ্চাত্যের এই ভয়ংকর মাদক এখন দেশের সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের হাতে। তাদের টার্গেট হয়ে স্বেচ্ছায় নিজের মূল্যবান মালামালসহ টাকাপয়সা হারাতেহয় সাধারণ মানুষকে। ফরিদপুরেরমতো মফস্বল জেলা শহরেও এদের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ।
ফরিদপুর শহরের ষাটোর্ধ্ব আলেয়া বেগম তার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য স্বামীকে নিয়ে ব্যাংক থেকে পেনশনের টাকা তুলে বাড়ি ফিরছিলেন। অটোরিকশায় উঠার কিছুক্ষণের মধ্যে চালকের আরেক সহযোগী উঠে ঐ অটোরিকশায়। এরপর ছলেবলে কৌশলে তাদের কাছে থাকা কাগজে মোড়ানো নেশাদ্রব্য নাকের কাছে নিয়ে শুকিয়ে তাকে স্মৃতিভ্রম করেনেন। এরপর তাদের কথামতো তিনি নিজেই প্রতারকদের হাতে খুলেদেন তার গলায় থাকা সোনার চেন, কানের দুল, হাতের আংটি। এসব নিয়ে দ্রুতই চম্পটদেয় প্রতারকরা। আলেয়া বেগম বুঝাতেই পারেননি তিনি নিজের হাতে স্বেচ্ছায় ওদের হাতে কেনো তুলে দিলেন এসব মূল্যবান জিনিসপত্র।
ভুক্তভোগী আলেয়া বেগমের ছেলে সাহিল তালুকদার ইরানসহ ফরিদপুর শহরের সাধারণ মানুষ বলছেন, তারা সম্প্রতি এমন বেশ কিছু ঘটনা জানতে পেরেছেন। একারণে তারা বেশ শংকিত।
এরআগে মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টিসহ বিভিন্ন চক্রের পর এখন রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে এই ভয়ংকর মাদকের শিকার হয়েছেন অনেকে। আর এইচক্র এখন মফস্বলের জেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ পথচারীদের পাশাপাশি যানচালক বিশেষ করে অটোরিকশা চালকেরা এতে খুবই উদ্বিগ্ন।
অপরাধ বিশ্লেষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্কোপালামিন নামে ভয়ংকর মাদক ব্যবহার করাহয় একাজে। শয়তানের শ্বাস বা ডেভিলস ব্রেথ হিসেবে পরিচিত পাওয়া এই মাদক মস্তিস্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। অন্যের দেয়া আদেশকে যান্ত্রিকভাবে অনুসরণ করতে বাধ্য করা হয় স্বেচ্ছায়। তারা নিজে কিছু চিন্তা করতে পারেন না শুধু সামনের লোক যা বলবে তাই করেন রোবটের মত । ফলে দুর্বৃত্তরা লোকজনকে সর্বস্বান্ত করতে মোক্ষক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এটি। সম্প্রতি এই চক্রের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সাধারণ মানুষ স্বভাবতই উদ্বিগ্ন।
ফরিদপুরের আইন শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী এ-ধরনের কিছু ঘটনার খবর জানতে পেরেছেন বলে স্বীকার করেছেন। পুলিশ সুপার মো: শাহজাহান জানিয়েছেন, তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে কাজ করছেন।
অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা যেমন বেড়েছে, তেমনি সংঘবদ্ধ অপরাধীরাও ব্যবহার করছে নিত্য নতুন কৌশল। এজন্য র্যাব ও পুলিশ সহ বিভিন্ন বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সাধারণ জনগণেরও সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।