দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট থেকে আর মাত্র এক ধাপ দূরে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। ২০১৬ সালে শিলিগুড়ির ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়। সাফের গেল পাঁচ আসরে একবার রানার্স-আপ, ৩ বার সেমিফাইনাল এবং একবার গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। তবে এবার আর শিরোপা হাতছাড়া করতে চায় না সাবিনা-সানজিদারা। ফাইনালের মহারণের আগে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন অদম্য এই ফুটবলাররা।
চলতি সাফে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড বাংলাদেশের। গ্রুপপর্ব ও সেমিফাইনাল মিলিয়ে চার ম্যাচে সাবিনা-স্বপ্নারা গোল করেছেন ২০টি। হজম করতে হয়নি একটিও। এছাড়া টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোল স্কোরারও বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। ৮ গোল নিয়ে সবার শীর্ষে আছেন তিনি। স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে নিজের ফেসবুকে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন সাবিনা খাতুন।
লিখেছেন, ‘টুর্নামেন্টজুড়ে আমাদের আকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশি সব সমর্থকদের জন্য হৃদয় নিংড়ানো কৃতজ্ঞতা। সবার জন্য বড় চমক অপেক্ষা করছে। দোয়ায় রাখবেন।’
এদিকে, কৃষ্ণা রানী সরকার নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অনেক স্বপ্ন নিয়ে এত প্রতিকুলতার মাঝেও ফুটবলে আমাদের পথচলা। সাফের ফাইনালে বিজয় তাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। তাই নেপালের বিপক্ষে আজকের ম্যাচ আমাদের জন্য এক যুদ্ধ। যেই যুদ্ধে আপনাদের সকলের আশীর্বাদ, দোয়া ও সমর্থন আমাদের বিশেষ অস্ত্র। ঈশ্বর চাইলে শিরোপা হাতেই দেখা হবে আপনাদের সঙ্গে।’
তবে আবেগঘন পোস্ট দিয়ে সমর্থকদের হৃদয় জিতে নিয়েছেন গর্বিত এ ফুটবল দলের সদস্য সানজিদা আক্তার। লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দলের হাত ধরে ২০০৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছিল বাংলাদেশ। এখনো আমরা সেই গল্প শুনি। বাংলাদেশ ফুটবলের বড় সাফল্যের মহাকাব্যে সেটি উজ্জ্বলতম অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এবার আমাদের জেতার সময় এসেছে। আমাদের দলের প্রতিটি সদস্য এটি জিততে মুখিয়ে আছে।
যারা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেই সকল স্বপ্নসারথিদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। নিরঙ্কুশ সমর্থণের প্রতিদান আমরা দিতে চাই। ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনীকে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরো নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই।
পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়ি ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়বো এমন নয়, এগারোজনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে।
আমরা জীবনযুদ্ধেই লড়ে অভ্যস্ত। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যাবো। জয় -পরাজয় আল্লাহর হাতে। তবে বিশ্বাস রাখুন, আমরা আমাদের চেষ্ঠায় কোনো ত্রুটি রাখবো না ইনশাআল্লাহ। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।’