সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়া। ছবি: সংগৃহীত
যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ডান হাত হিসেবে পরিচিত ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) ক্যাডার বিধান বড়ুয়াকে চট্টগ্রামের রাউজনে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে নানামুখী অপপ্রচারে নেমেছে বিএনপি। বিশেষ করে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক থেকেই ছড়ানো হচ্ছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও উসকানিমূলক প্রচারণা।
এরমধ্যে একটি বৌদ্ধ পরিবারের ওপর হামলা এবং লুটপাট করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হলেও খোদ রাউজান উপজেলা বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ বিষয়টিকে মিথ্যা অপপ্রচার বলে দাবি করেছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান র্যাব ও পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়া। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পরই পুরোনো সহযোগীদের নিয়ে বিধান রাউজানে আসবে-এমন খবরে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে বিগত বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়া বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ছিল সবচেয়ে বেশি। তাদের প্রতিবাদের এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য সাজানো হয় বাসা-বাড়িতে হামলার নাটক। যেখানে বৌদ্ধদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হয়েছে বলে অপপ্রচার চালায় বিএনপি।
এর আগে ফেসবুকে বিএনপির ভেরিফায়েড পেজ থেকে প্রচার করা হয় ‘চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়িতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলা। এ সময় ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর, নারী ও শিশুদের ওপর হামলা এবং লুটপাট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা’ শীর্ষক একটি সংবাদ। তবে এ সংবাদ মিথ্যা দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছে রাউজান উপজেলা বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ।
সংগঠনের সভাপতি সুকুমার বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক অংশুমান বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘রাউজান উপজেলা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদহারণ। রাউজানে বৌদ্ধ সম্প্রদায় অত্যন্ত সুন্দর ও নিরাপদে অবস্থান করছে। কিছু কিছু কুচক্রী মহল হীন অভিপ্রায়ে ও রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে রাউজানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর কোনো হামলার ঘটনা রাউজানে ঘটেনি। আমরা রাউজানে বৌদ্ধ সম্প্রদায় অত্যন্ত সুরক্ষিত ও সুন্দরভাবে নিজেদের ধর্মীয় উৎসব পালন করি। আগামী প্রবারণা পূণিমাকে ঘিরে বিএনপির ফেসবুক পেজ থেকে এ মিথ্যা, বানোয়াট ও অসত্য স্ট্যাটাসের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
বিষয়ে জানতে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বুধবার রাতে তিনি বলেন, রাউজানে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। একটি পক্ষ ইচ্ছে করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যাদের পেজ থেকে এ তথ্য দেয়া হয়েছে, তারাই অপপ্রচার চালাচ্ছে। ফেসবুকে একটি পক্ষ যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে বড়ুয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে প্রতিবাদলিপি দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাউজানের উপজেলা চেয়্যারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘রাউজানে বড়ুয়া সম্প্রদায়ের ওপর কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। হামলার প্রশ্নই আসে না। ফেসবুকে বিভিন্নজন, বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে আমাদের তো কিছু করার নেই।’
রাউজান উপজেলা আত্তয়ামী স্বেচ্ছোসেবক লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য চন্দ্রসেন বড়ুয়া জানান, আধার মানিক এলাকার একটি জায়গায় কে বা কারা হামলা চালিয়েছে। মূলত সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর নাম খারাপ করতে চায়। এমপির ওপর দায় চাপাতে চায়। নিজেরা হামলার ঘটনা ঘটিয়ে রাউজানে সব ধর্মের যে সম্প্রীতি রয়েছে সেটি নষ্ট করতে বদ্ধপরিকর একটি পক্ষ। সেই কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বিগত বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে রাউজান-রাঙ্গুনীয়াসহ পুরো উত্তর চট্টগ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল বিধান বড়ুয়ার অনুগত বাহিনী। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপির প্রথম সারির ক্যাডার ছিলেন এ বিধান বড়ুয়। পরবর্তীতে সাকা চৌধুরী বিএনপিতে যোগ দিলে বিধান বড়ুয়া ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে বিএনপিতে যোগ দেয়।
অসংখ্য হত্যা-চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে বিধান বড়ুয়ার বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়ার বিরুদ্ধে সুর্নির্দিষ্ট মামলা রয়েছে ২৫টির বেশি। এর মধ্যে দুটি অস্ত্র মামলায় তার ১৭ বছরের সাজাও হয়েছে। বিগত ২০১১ সালে অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন বিধান বড়ুয়া। এর মাঝে একবার জামিন পেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সবশেষ ২০২০ সালে একটি মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
রাউজানের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়াকে সামনে রেখে রাউজানে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। বিশেষ করে ঝিমিয়ে পড় সংগঠনকে চাঙা করার পাশাপাশি পুরাতন সহযোগীদের সংগঠিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে। যে কারণে বিএনপির ফেসবুক পেজ থেকে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে বিধান বড়ুয়াকে আলোচনায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।