কী হচ্ছে টিসিবির পণ্য বিক্রিতে? ফ্যামিলি কার্ড হাতে পাননি অথচ সেই কার্ডেই মাসের পর মাস পণ্য তুলছে একটি চক্র। এমনকি পণ্য নিয়ে দিনের পর দিন ডিলার অপেক্ষা করলেও কিনতে আসছেন না কার্ডধারীরা। এমন ঘটনাই ঘটেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের দাবি, নিয়ম মেনেই কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। তাই এর পরের ধাপে অনিয়ম-দুর্নীতি হলে তার দায় তারা নেবেন না। এদিকে টিসিবি বলছে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দায়-দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
সারা দেশে ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্নআয়ের পরিবারের মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তবে এখনও অনেক পরিবারই ফ্যামিলি কার্ড পায়নি। আর কার্ড হাতে না পেলেও তাদের কার্ড ব্যবহার করে একটি চক্র সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য কিনছে।
এ বিষয়ে এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘আমার কার্ড দিয়ে নাকি দুবার পণ্য নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমি তো পাইনি। কার্ড আমার, তাহলে পেল কে? আমার কার্ড ব্যবহার করে অন্য কেউ খাবে, তা তো হতে পারে না।’
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে শাহআলী থানার পাশের একটি ডিলার পয়েন্টে দিনভর এমন অন্তত কয়েকশ’ মানুষ এসেছেন, যারা এখনও কার্ড পাননি। অথচ তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ‘টিসিবি সেবা’ অ্যাপে চেক করে জানতে পারছেন মাসের পর মাস তাদের নামে বরাদ্দ আসা পণ্য তুলে নিচ্ছে অন্য কেউ। এবার তাদের কার্ড চান ভুক্তভোগীরা।
আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমাদের কার্ড ঠিকই এসেছে। কিন্তু আমরা পাইনি। অন্য কেউ এর সুবিধা ভোগ করছে।’
সংশ্লিষ্ট ডিলারের অবস্থা আরও খারাপ। এক হাজার জনের বরাদ্দ নিয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু করেছেন ব্যাপক চাহিদার টিসিবির পণ্য বিক্রি। পণ্য আসার আগে অন্তত ১ হাজার ১০০ জন কার্ডধারীকে ফোন ও এসএমএস করে জানিয়েছেন। অথচ ২১ সেপ্টেম্বর রাত অবধি চার দিনে তিনি মাত্র ২১৫ জনের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পেরেছেন।
রাজধানীর মিরপুরে শাহআলী থানার পাশের একটি ডিলার পয়েন্টের ডিলার বলেন, ‘ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে যখন চেক করলাম, তখন দেখি সেই ব্যক্তির পণ্য এরই মধ্যে কেউ নিয়ে গেছে। তখন আমি তাকে বললাম যে আপনার কার্ড তো ওঠানো হয়েছে। কেন আপনি কার্ড পাননি? তখন তিনি জানান যে তিনি কার্ড পাননি।’
কেন কার্ডধারীরা পণ্য কিনতে আসছেন না বা কীভাবে তাদের নামে পণ্য উঠে যাচ্ছে–এমন প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দাবি, তাদের হাতে আসা কার্ড বিতরণে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। তাই প্রতারণার দায় সংশ্লিষ্ট কার্ডধারী, ডিলার ও টিসিবির কাঁধে চাপান তারা।
এ বিষয়ে ডিনসিসির ৬, ৭, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর শিখা চক্রবর্তী বলেন, ‘একজনের নামে দুই কার্ডও চলে আসছে। এমনকি খালি পেজও চলে আসছে। মানে কার্ড আসছে, তবে খালি।’
টিসিবির ওপর দায় চাপিয়ে ডিএনসিসির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আবুল কাশেম মোল্লা বলেন, ‘টিসিবির মধ্যে বিশৃঙ্খলা রয়েছে। টিসিবি কাকে ডিলার হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছে, এ বিষয়টি আমাদের এলাকার জনগণও জানতে পারছেন না, কাউন্সিলরও জানতে পারছেন না।’
এদিকে টিসিবি বলছে, ডিলাররা ফ্যামিলি কার্ডের বিপরীতে পণ্য বিক্রি করেন। আর তা বিতরণ করেন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। বিতরণে দুর্নীতি হলে সেই দায় টিসিবি নেবে না।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবীর বলেন, বিক্রির সময় তদারকির দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট জোনপ্রধান ও কাউন্সিলরদের। টিসিবি শুধু পণ্য বরাদ্দ করছে এবং সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের কাছে পণ্য পৌঁছানোর দায়িত্ব নিয়েছে।
সরকারের আলোচিত ও জনসমাদৃত এ কর্মসূচিতে এমন প্রতারণা বন্ধে দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায় না এড়িয়ে দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ সাধারণ মানুষের।
১১ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া টিসিবির সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের আওতায় ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে একজন ক্রেতা এক দফায় ৫৫ টাকা দরে এক কেজি চিনি, ৬৫ টাকা দরে সর্বোচ্চ দুই কেজি মসুর ডাল, ১১০ টাকা দরে দুই লিটার তেল ও ২০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারেন।