ছবি : সংগৃহীত
আল্লাহ তা’য়ালা মানবজাতিকে জ্ঞান অর্জনের বিশেষ যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন দুনিয়ার জীবনের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে, তেমনি আখেরাতের জীবনেরও মুক্তি নিশ্চিত করতে পারে। আর জ্ঞান হলো মানুষের জীবন চলার পথে আলো। আলো ছাড়া যেমন কেউ পথ চলতে পারে না, তেমনি জ্ঞান ছাড়াও প্রকৃত মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করা যায় না।
ঈমানদার ব্যক্তি জ্ঞানী হবে-এটাই ঈমানের দাবি। পবিত্র কোরানের বহু আয়াতে জ্ঞানার্জনের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হাদিসের বিশুদ্ধ যত কিতাব রয়েছে তার সবগুলোতে কিতাবুল ইলম্ বা জ্ঞানার্জন বিষয়ক অধ্যায় রয়েছে। ইসলামি আইন শাস্ত্রের যত গ্রন্থ রয়েছে তার সবগুলোতে জ্ঞানার্জন বিষয়ক অধ্যায় কিতাবের অগ্রভাগে সন্নিবেশিত হয়েছে।
পবিত্র কোরানে এরশাদ হয়েছে, ‘পাঠ করুন আপনার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন’ (সূরা আলাক : ১)।
জ্ঞানী ব্যক্তিদের প্রশংসায় আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘আর আমি ওই দৃষ্টান্তগুলো মানুষের উপদেশ গ্রহণের উদ্দেশে বর্ণনা করে থাকি। বস্তুত ওইসব দৃষ্টান্ত কেবল জ্ঞানী ব্যক্তিরাই বোঝে’ (সূরা আনকাবুত : ৪৩)।
মহান আল্লাহ আরও এরশাদ করেন, ‘আপনি বলুন, যারা জ্ঞানী এবং যারা জ্ঞানী নয় তারা কি সমান হতে পারে?’ (সূরা যুমার : ৯)।
কোরআনের অপর স্থানে জ্ঞান ও অজ্ঞতা সম্পর্কে এভাবেই পার্থক্য নির্ণয় করা হয়েছে- ‘হে নবি বলুন, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান লোক কি এক হতে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক ও অভিন্ন হতে পারে?’ (সূরা রাদ : ১৬)।
জ্ঞানী লোকদের আল্লাহ তায়ালা উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের সুউচ্চ মর্যাদা দান করবেন’ (সূরা মুজাদালাহ : ১১)।
জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে প্রিয় নবী (সা.) বর্ণনা করেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ’ (ইবনে মাজাহ)। এখানে জ্ঞান বলতে ইসলামি জ্ঞান বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, একজন মুসলমানের ওপর আল্লাহর কি কি হুকুম রয়েছে এবং তা রাসূল (সা.) এর নিয়ম অনুযায়ী কিভাবে পালন করা যায় তা জানতে হবে। না জানলে গুণাহ হবে।
বিখ্যাত হাদীসগ্রন্থ মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণিত হয়েছে, প্রিয় নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান লাভের উদ্দেশে কোনো পথ অবলম্বন করলো আল্লাহ তায়ালা এর দ্বারা তার বেহেশতের পথ সহজ করে দিবেন।
যখনি কোনো একটি দল আল্লাহর ঘরসমূহের কোনো একটি ঘরে (মসজিদ, মাদ্রাসায়) একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করতে থাকে এবং তা পরস্পর আলোচনা করতে থাকে তখনি আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের ওপর স্বস্তি ও শান্তি অবতীর্ণ হতে শুরু করে, আল্লাহর রহমত তাদের ঢেকে ফেলে, ফেরেশতারা তাদের ঘিরে ফেলে এবং আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের কাছে এসব বান্দার আলোচনা (প্রশংসা) করেন। যার কর্ম তাকে পিছিয়ে দেয় তার বংশ মর্যাদা তাকে এগিয়ে দিতে পারে না (মুসলিম শরীফ)।
হযরত মুআবিয়া (রা.) বলেন, প্রিয় রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তালা যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনের (ইসলামের) সুষ্ঠু জ্ঞান দান করেন (বুখারী, মুসলিম)।