সাউথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২২-এর সেরা উপস্থাপকের পুরস্কার পেলেন তানিয়া আফরিন। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে জমকালো এক অনুষ্ঠানে তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। তানিয়া আফরিন বর্তমানে দীপ্ত টিভিতে উপস্থাপক হিসেবে কর্মরত।
পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে তানিয়া আফরিন বলেন, আমি আমার কাজের মূল্যায়ন হিসেবে সাউথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। এ জন্য আমি ভীষণভাবে গর্বিত এবং আনন্দিত। এই পুরস্কার পাওয়ায় উপস্থাপক হিসেবে আমার ওপর দায়িত্ব আরও বহুগুণ বেড়ে গেল। ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন কাজ উপহার দিতে চাই দর্শকদের।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আমি আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছি। এই কঠিন পথ অতিক্রম করার জন্য আমার পরিবারের সাপোর্ট সবসময় পেয়েছি। পরিবার সবসময় পাশে থেকে আমার আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। যখনই কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, আমার পরিবার আমার পাশে থেকে আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
স্পষ্ট উচ্চারণ আর সাবলীল ভঙ্গিমা দিয়ে বর্তমানে লাইম লাইটে উঠে এসেছেন তানিয়া আফরিন। পেয়েছেন জনপ্রিয়তা আর স্বীকৃতি। একটু একটু করে নিজেকে গড়েই শুরু করেন ক্যারিয়ার। এই পথচলা সম্পর্কে তিনি বলেন, মাস্টার্স শেষ করে মিডিয়ায় কাজ করার জন্য আমি নিজেকে গড়তে শুরু করি। তবে শুরুর দিকে আমার এই পথচলা ভীষণ কঠিন ও প্রতিবন্ধকতার ছিল। আমার পথচলা শুরু করি দেশের স্বনামধন্য আবৃত্তি সংগঠন বৈকুণ্ঠে যোগদান করে। আমার সব জটিল সমস্যাগুলো সমাধানে অনেক সাহায্য করেছেন আমার গুরু শিমুল মোস্তফা। কবিতার প্রতি অগাধ ভালোলাগা আমাকে আকৃষ্ট করত। বৈকুণ্ঠে আবৃত্তি করার সেই সময়গুলো আমার কাছে অনেক আনন্দের ছিল।
আবৃত্তিচর্চার মাধ্যমেই উপস্থাপক হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছেন জানিয়ে তানিয়া আফরিন বললেন, বৈকুণ্ঠে থাকাকালে মঞ্চে শিমুল ভাইয়ের নির্দেশনায় কয়েকটি কাব্যনাট্যের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাগুলো আর সেই দিনগুলো আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। বৈকুণ্ঠে থাকাকালে আমি যে কাজগুলো করেছিলাম সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- আলো সাগরের পদাবলি, জিয়ন্তকাল, পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ প্রভৃতি। তারপর ধীরে ধীরে আমার এগিয়ে চলা।
তিনি বলেন, আমার পরিবারের কেউই মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত না এবং মিডিয়ায় কেউই আমার পরিচিত ছিল না। তাই আমাকে অনেক সংগ্রাম আর যুদ্ধ করে ধৈর্য ধরে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলতে হয়েছে। এই সংগ্রামে আমার পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছি বলেই যতোই কঠিন দিন এসেছে আমি হাল ছেড়ে দেইনি।
আবৃত্তি থেকে উপস্থাপনায় এলেন কী করে? জানতে চাইলে তানিয়া আফরীন বলেন, আবৃত্তি চর্চার মাঝেই একদিন আমি চ্যানেল আইয়ের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ফিমসের অনুষ্ঠান বিভাগে যোগদান করি। এরপর ২০১৭ সালে আমি দীপ্ত টিভিতে ভয়েজ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাই। পাশাপাশি আমি সেখান থেকে বিজয় টিভিতে অনুষ্ঠান ও সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করি। বিজয় টিভিতে দুই বছর কাজ করার সময় সেখানকার অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান আনোয়ার শাহী ভাই আমাকে উপস্থাপক হিসেবে কাজ করার জন্য বিশেষ ভাবে সহযোগিতা করেন। ২০১৮ সালে গাজী টিভিতে কাজ করার সুযোগ পেলাম। এখানে ২০২০ সাল পর্যন্ত কাজ করে আমি আবারও দীপ্ত টিভিতে উপস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করি।
সৃজনশীল কাজে স্বীকৃতি মানুষের পথচলায় এনে দেয় গতি। এরই মধ্যে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তানিয়া আফরীন পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারীর সফলতা অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করে আমাকে সেরা উপস্থাপক হিসেবে পুরস্কৃত করা হয় দেশের স্বনামধন্য সাঁকো টেলিফিল্ম থেকে। আমার জীবনে এই পুরস্কারটি অনেক বেশি গর্বের। কারণ, আমি আমাদের দেশের কিংবদন্তি গায়িকা রুনা লায়লা ম্যামের হাত থেকে পুরস্কারটি গ্রহণ করেছিলাম; যা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন। পাশাপাশি দীপ্ত টিভিতে কাজ করার সুবাদে আমাকে সেরা উপস্থাপক হিসেবে পুরস্কৃত করে দেশের বহুল পরিচিত সংগঠন বন্ধন কালচারাল ফোরাম ।
বর্তমানে তানিয়া আফরিন দীপ্ত টিভিতে উপস্থাপক হিসেবে কাজ করার প্লাটফর্ম মিডিয়া ও সাউন্ড প্রিন্টার নামে দুটি প্রতিষ্ঠানে ভয়েজ আর্টিস্ট হিসেবে নিয়মিত কণ্ঠ দিচ্ছেন।