বায়ুমণ্ডলে কার্বণ নিঃসরণের হার কমাতে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর নীরব ভূমিকায় হতাশা জানিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে থাকা দেশগুলো। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের হস্তক্ষেপও কামনা করেন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বছরের পর বছর ধরে নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিশ্বনেতারা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়ালেও নেই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। জলবায়ু চুক্তির বাস্তাবায়ন তো দূরে থাক, উল্টো প্রতিনিয়ত বিশ্বনেতাদের দেয়া নানা প্রতিশ্রুতি আর অঙ্গীকার থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন বিশ্বনেতারা। এতে ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়ছে বিশ্ব, বাড়ছে জলবায়ু বিপর্যয়ের আশঙ্কা।
এর মধ্যেই শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপের দাবিতে নিউইয়র্কে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো জলবায়ুকর্মী। এ সময় হাতে নানা দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের। একই সময়ে বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে একযোগে চলে বিক্ষোভ।
এদিকে শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ ঝাড়েন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানরা। একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের হস্তক্ষেপও কামনা করেন তারা।
ভানুয়াতুর প্রেসিডেন্ট নিকেনিকে ভুরোবারাভু বলেন, সময় শেষ। যা করার এখনি করতে হবে, নয়তো জলবায়ু বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। আমার মনে হয় সময় এসেছে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের হস্তক্ষেপ করার।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই মুহূর্তে পাকিস্তান যতটা হুমকিতে রয়েছে, এতটা হুমকিতে আগে কখনোই ছিল না। সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যাই তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। জানি না সামনে আমাদের জন্য আর কি কি অপেক্ষা করছে।
ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট ফার্ডিনান্ড মার্কোস বলেন, আমার মনে হয় না বিশ্বে এই মুহূর্তে জলবায়ুর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এমন কোনো সংকট রয়েছে, যেদিকে জাতিসংঘের বেশি মনোযোগ দেয়া দরকার। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এতটাই ভয়াবহ যে, যার সঙ্গে আর কিছুর তুলনা হয় না। আর যারা এ জন্য সবচেয়ে কম দায়ী তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তবে বায়ুমণ্ডলে কার্বণ নিঃসরণের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির পেছনে অভিযোগের আঙুল যাদের দিকে, সেই যুক্তরাষ্ট্র বরাবরের মতো এবারও দিয়েছে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেয়া ভাষণে জলবায়ুর পরিবর্তনরোধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তুলে ধরেন তার সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ। এ ছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির হার দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিশ্বনেতারা, তা থেকে এখনও অনেকে দূরে বিশ্ব। এভাবে চলতে থাকলে এ শতাব্দীর শেষনাগাদ বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে পৌঁছাবে বলেও সতর্ক করে দেন তারা।