জ্বালানি সংকট সমাধানে সায় মেলেনি কাতারের, অপচয় কমানোর পরামর্শ
এমন অবস্থায় নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানো আর জ্বালানি সাশ্রয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামলানো ছাড়া উপায় নেই সরকারের। সেই সঙ্গে সিস্টেম লস ও অপচয় কমানোর ওপর জোর দিয়েছেন আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক খন্দকার সালেক সুফী।
নেই গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহ। বাধ্য হয়েই তাই লাকড়ি জ্বালিয়ে রান্না করতে হচ্ছে যাত্রাবাড়ীর তাহমিনা বেগমকে। আর এটিই এখন রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় গ্যাস সরবরাহের প্রতীকী চিত্র।
জ্বালানি সংকটে একইভাবে ধুঁকছে শিল্প, বিদ্যুৎখাতসহ গ্যাসনির্ভর অধিকাংশ কার্যক্রম। বন্ধ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার দুই ডজন বিদ্যুৎকেন্দ্র। আর এ সংকটের পেছনে অন্যতম কারণ এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়া।
ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে আকাশচুম্বী দামের কারণে স্পট মার্কেটে এলএনজি কেনা থেকে বিরত আছে সরকার। ফলে দেশে গ্যাসের সরবরাহ কমে যায় দৈনিক ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। পরিস্থিতি সামলাতে জুলাই-আগস্টে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় সামান্য পরিমাণে বাড়ানো হয় এলএনজি সরবরাহ। কিন্তু এখানেও রয়েছে নির্ধারিত গণ্ডি। বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে কাতার ও ওমান থেকে বছরে আমদানি সম্ভব সর্বোচ্চ সাড়ে তিন মিলিয়ন টন এলএনজি। আর এ হারের ওপর ভিত্তি করেই সাজাতে হয় সারা বছরের সরবরাহ পরিকল্পনা।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কেনা এলএনজি থেকে আগস্টে গ্যাস মিলত দিনে প্রায় সাড়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে বর্তমানে এই হার নেমে এসেছে ৪৭০-৮০ মিলিয়নে। আর অক্টোবর-নভেম্বরে কমে যেতে পারে আরও প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে বৈশ্বিক সংকটের আগে যেখানে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ ছিল ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি, সেটি আগামী মাসে ২ হাজার ৭০০ মিলিয়নে নেমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সংকটময় পরিস্থিতিতে সরকারের চেষ্টা ছিল কাতার থেকে বছরে এলএনজি সরবরাহ বাড়ানোর। তবে এ প্রস্তাবে সহসাই মিলছে না কাতারের সায়। যদিও পেট্রোবাংলার আশা, আপাতত সমাধান বিকল্প উপায়েই।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, সারা বিশ্বের যে অবস্থা, সেখানে বাংলাদেশ কিন্তু তার বাইরে নয়। বিশ্ব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরাও স্বাভাবিক হবে। আর দ্বিতীয় কথা হলো, আমরা দেশীয়ভাবে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শ খন্দকার সালেক সুফী বলছেন, নিজস্ব জ্বালানির সর্বোচ্চ ব্যবহারে গুরুত্ব না দেয়ায়, বিদেশনির্ভর এলএনজির কারণে মাশুল গুনতে হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিতে। তার পরামর্শ অপচয় কমালে কিছুটা উপকৃত হবে জ্বালানি খাত।
তিনি আরও বলেন, প্রথম হলো সিস্টেম লস জিরো করতে হবে এতে ২০০ মিলিয়ন নিরাপদ করা যায়। আরেকটি হলো সরকারের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে যত লিকেজ হচ্ছে, সঞ্চালনব্যবস্থা, বিতরণ ব্যবস্থায় যেসব লিকেজ হচ্ছে, সেগেুলো টাইট দিলে (শক্তভাবে দেখভাল করলে) আরও পাওয়া যাচ্ছে ১০০ মিলিয়ন। সেই ২০০ প্লাস ১০০ এটা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।
পাশাপাশি বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রগুলোর সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারে জোর দিচ্ছেন এ বিশেষজ্ঞ।