দেশের পুঁজিবাজার চাঙা করতে সব ধরনের সহায়তা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আশ্বাস দিলেন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।
তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে পুঁজিবাজারে শুরু হবে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন। এ সময় আরেকটি বিষয় নিয়ে গভর্নর জানান, সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে আসলে কোনো ধস নামেনি, তারা নিজেরাই বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন।
প্রতিবারের মতো এ বছরও বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালন করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
সোমবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের উদ্বোধনী উপলক্ষে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দেন।
এরপর দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনায় উঠে আসে সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা। এ সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না বাড়লে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়; এ জন্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, দেশীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হলে আসবে বিদেশি বিনিয়োগ। এ জন্য দরকার সমন্বিত সহায়তা।
পুঁজিবাজারের সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
এ সময় সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নিয়ে কথা বলেন গভর্নর।
তিনি বলেন, ‘আমরা পত্রিকায় দেখলাম সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস। আসলে ধস নামেনি, আমরা বিক্রি কমিয়ে দিয়েছি। এখন অন্যভাবে রিপোর্ট করা হচ্ছে, এটা ধস না। আমরা চাই মানুষ টাকা নিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেটে আসুক। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে ক্যাপিটাল মার্কেটে আসুক, যাতে উদ্যোক্তারা এ টাকা নিয়ে ইনভেস্ট করতে পারেন। আর সঞ্চয়পত্র যেহেতু উচ্চ ইন্টারেস্ট রেট, সরকার অন্য জায়গা থেকে কিন্তু কম ইন্টারেস্টে টাকা সংগ্রহ করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, সঞ্চয়পত্রের যে হাই ইন্টারেস্ট, আমরা কিন্তু জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সেটা দেই। সবার ট্যাক্সের টাকা দিয়ে এই সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীদের আমরা ইন্টারেস্ট দিচ্ছি। সুতরাং গরিব মানুষের ট্যাক্সের টাকা নিয়ে আমরা বড়লোককে ফাইন্যান্স করছি। আমি অর্থ সচিবের দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম যে কাজটা করি, এটা অটোমেশন করা। অটোমেশনের উদ্দেশ্য ছিল আগে ক্যাপ এনশিউর করা। একজন লোক যেন ৫০ লাখের বেশি কিনতে না পারেন। সেটা আমরা করে ফেলেছি। এখন কেউ ব্যাংক থেকে ৫০ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না।
গভর্নর বলেন, দ্বিতীয় হলো সঞ্চয়পত্রের ইন্টারেস্ট রেট অনেক কমানো; কিন্তু আমাদের পলিটিশিয়ান যারা, তারা আমাদের থেকে অনেক বেশি বোঝেন, তারা আমাদের বললেন এটার মধ্যে একটা সেফটিনেট এলিমেন্ট আছে। যেটা আমরা ইগনোর করে গিয়েছিলাম। কিছু লোক কোনোভাবে সঞ্চয়পত্র জোগাড় করে; তার ওপর ডিপেন্ড করে, বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ। তখন আমাদের পরামর্শ দেয়া হলো, একটা সময় পর্যন্ত ইন্টারেস্ট রেট ঠিক রেখে তারপর কমিয়ে আনা।
আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘আমরা সেটাই করেছি। ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ইন্টারেস্ট ঠিক রেখে, এরপর এক শতাংশ, তারপর এক শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি এবং সেখানে আরও ১০ শতাংশ ট্যাক্স আছে। যেটা হয়েছে, এখন সঞ্চয়পত্র ততটা অ্যাট্রাকটিভ (আকর্ষণীয়) না। বরং আপনি যদি বন্ড মার্কেটে যান, এটা সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে কম্পিটিশন করতে পারবে। এটা করতে আমাদের চার বছর সময় লেগেছে।’
শুধু ব্যক্তি বিনিয়োগ নয়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ নেয়ারও আহ্বান জানান বক্তারা।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।