শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটে সাবেক শাসক পরিবার রাজাপাকসেদের দায় আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার (৭ অক্টোবর) সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসে ও সাবেক সরকারের আরও কয়েকজন মন্ত্রী ও আমলার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিমেকোর্ট।
গত ১৭ জুন সাবেক প্রভাবশালী রাজাপাকসে পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে স্থানীয় অধিকার সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল শ্রীলঙ্কা। তাতে বলা হয়, শ্রীলঙ্কা বর্তমানে যে বৈদেশিক ঋণের বিশাল বোঝা বহন করছে এবং দেশের অর্থনীতির যে বেহাল অবস্থা তার জন্য রাজাপাকসে পরিবারই সরাসরি দায়ী।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে শ্রীলংকা। ২ কোটি জনসংখ্যার এই দেশটিতে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে বিপর্যন্ত জনজীবন।
আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি, দুর্বল সরকারি অর্থব্যবস্থা এবং করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলেও রাজাপাকসে পরিবারের দায়ও কম নয়।
স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ এ অর্থনৈতিক সংকটের জন্য রাজাপক্ষে পরিবারকে দায়ী করে সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নামে লঙ্কান জনগণ।
চলতি বছরের মার্চ থেকে শুরু হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। মে মাসের শুরুর দিকে বিক্ষোভ প্রচণ্ড রুপ নেয়। ওই সময় সরকার সমর্থক ও সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ৭৮ জন আহত হন।
উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানান এবং অনুগত রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে সরকার পরিচালনা অব্যাহত রাখেন।
এরপর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বিক্ষোভ আবারও আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ৯ জুলাই শত শত বিক্ষোভকারী রাজধানী কলম্বোয় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বাসভবনে ঢুকে পড়ে।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে বাসভবন ছেড়ে পালান এবং ওইদিন রাতেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন গোতাবায়া। কিন্তু পদত্যাগপত্র জমা দিতে গড়িমড়ি শুরু করেন। ফলে বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়।
ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ১৩ জুলাই দেশ ছেড়ে পালান গোতাবায়া। প্রথমে মালদ্বীপ যান তিনি। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর এবং পরে থাইল্যান্ড। সিঙ্গাপুর অবস্থানের সময় ১৪ জুলাই নিজ দেশের স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। পরদিন ১৫ জুলাই তার আনুষ্ঠানিক পদত্যাগের ঘোষণা দেন শ্রীলংকার স্পিকার।
এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন রাজাপাকসের দের অনুগত সাবেক প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। এরপর প্রায় অর্ধ শতাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিশাল সরকার নিয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি উদ্ধারের চেষ্টা করছেন তিনি।
এদিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলে গত ২ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আসেন গোতাবায়। ক্ষমতাচ্যুত হলেও বিমানবন্দরে বিক্রমাসিংহের এমপি-মন্ত্রীরা তাকে ফুলের মালা দিয়ে স্বাগত জানান। নিয়মানুযায়ী বর্তমানে একটি সরকারি বাড়িতে অবস্থান করছেন গোতাবায়া।